এসো মা: কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি। শুক্রবার, হাওড়া কদমতলার একটি বাড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
‘‘শুধু পুজো নয়। এ হল, লক্ষ্মীলাভে গৃহস্থের ওভারটাইম!’’ হাসতে হাসতে ব্যাখ্যা করছিলেন নবদ্বীপ এবং কলকাতার পুরোহিত শিক্ষণ কেন্দ্রের মাস্টারমশাই সুশান্ত ভট্টাচার্য।
তাঁর মতে, লক্ষ্মীলাভের তাগিদ তো জীবনযুদ্ধেরই অঙ্গ। পুজো, রাত জাগা হল ‘ওভারটাইম’। ‘‘এ বার করোনা- কালে তিথির ফেরে সেই ওভারটাইমের বদলে বাড়তি সময় বা ‘একস্ট্রা টাইম’ও মিলতে পারে।’’— বলছেন সুশান্তবাবু। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বহু বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়ে গেলেও তিথির ফেরে আজ, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকে লক্ষ্মীপুজোর সুযোগ পাচ্ছেন। করোনা আবহে পুজোর চাপটা দু’দিনে ছড়িয়ে গেলে যজমান বা পুরোহিত— দু’জনের শরীরই খানিক রেহাই পাবে বলে অনেক পুরোহিতের অভিমত।
ঠাকুরমশাইকে ধরে পুজোর পিঁড়িতে বসাতে পাশাপাশি বাড়ির টানাটানি বা ‘পুরোহিত অপহরণের’ নানা গল্পও মিশে বাঙালির ঘরোয়া লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজোয়। তার উপরে বহু বাড়িতেই ঠাকুরমশাই আসতে আসতে রাত ১২টা বেজে যায়। এ বছর সেই ঝামেলা থেকে কিছুটা রেহাই মিলল তিথির ফেরেই। সুশান্তবাবু বলছিলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পূর্ণিমা পড়লেও তা থাকছে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। অনেকেই উদয়গামী তিথিতে (সূর্যোদয়ের সময়ের তিথি) পুজো সেরে থাকেন। তাই লক্ষ্মীপুজো ও পূর্ণিমাকালীন সত্যনারায়ণ পুজো শনিবারও হবে।’’
তবে এই পুজোর রীতি নিয়ে কিছু আপত্তিও আছে। উত্তর কলকাতা ব্রাহ্মণ সমাজের সম্পাদক প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য দু’দিন ধরে পুজোর বিধান স্বীকার করছেন না। ‘‘নিশীথে বরদা লক্ষ্মী মন্ত্রেই রাত্রি জাগরণ ও পাশা খেলার (অক্ষক্রীড়া) কথা বলা আছে। দু’দিন ধরে পূর্ণিমা চললে যে রাতে পূর্ণিমার শুরু, সেই প্রদোষকালে পুজোই যথাযথ।’’— বলছেন তিনি। আবার সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘শাস্ত্র নিয়ে কড়াকড়ি সব পরিস্থিতিতে চলে না। যজমান, পুরোহিত— সকলেরই বয়স হয়েছে। পুজো শুরু হতে রাত ন’টা বাজলেও অনেকের সমস্যা হয়। অতিমারির পরিস্থিতিতে পুজোটাও সাবধানে সারতে হচ্ছে। এক সন্ধ্যায় সবার পুজো সারা না গেলে পরের দিনে সমস্যা কী? পূর্ণিমা তো রয়েছেই।’’ অনেক ঠাকুরমশাই-ই এ বার পুজোয় বসার আগে অঞ্জলির ফুল কোথায় রাখা, দেখে নিচ্ছেন। যাঁরা অঞ্জলি দেবেন, তাঁরা কোথায় ফুল ছুড়বেন দেখে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে পুজো সারার আয়োজন করছেন। প্রণামও তাঁরা নিচ্ছেন দূর থেকেই।
এ বছর দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর ভিড় এড়াতে গিয়ে অনেক পুরোহিতের প্রণামী লাভ অর্ধেক কমে গিয়েছে। তবে প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থও বাস্তববোধে বিশ্বাসী। বলছেন, ‘‘অনেক যজমানকেই এ বছর বলা হয়েছে, পুজো নিজে সেরে নিতে। সব ঠাকুরমশাইয়ের পক্ষে অত ঘোরাঘুরি সম্ভবও নয়।’’ দু’দিন ধরে লক্ষ্মীপুজো প্রসঙ্গে শম্ভুনাথবাবুর মত, ‘‘শুক্রবার কোজাগরীর রাতে পুজো করতে পারলে ভাল। কিন্তু মনের তৃপ্তিও ফেলনা নয়। সুবিধা মেনে শনিবারও বেশ কিছু লক্ষ্মীপুজো হবে।’’ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজভুক্ত পুরোহিত সঞ্জীব ভট্টাচার্য আবার বলছেন, রঘুনন্দনের ‘তিথিতত্ত্ব’ অনুযায়ী শুক্রবার পুজো সারার কথা বলা হলেও বৈষ্ণবদের গোস্বামী মতে শনিবারই লক্ষ্মীপুজোর সময়। ‘‘আমরা শ্রীহরিভক্তি বিলাস স্মৃতি মেনে চলি। তাতে শনিবার সন্ধ্যায় পুজো।’’
সব মিলিয়ে করোনা-কালে পুজোর সময় বেশি হওয়াটা অনেকেই সুবিধাজনক বলে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy