Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Social Media

শহরে কম্পন সামান্যই, তবে সমাজমাধ্যমে চর্চা চ‌‌‌‌লল দিনভর

ধরিত্রী কেঁপে ওঠার এই মৃদু অনুভূতি নিয়েই শনিবার সকাল থেকে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ নিছকই মজা করেছেন। কেউ আবার অতি সামান্য হলেও নিজের অনুভূতি অন্যদের জানিয়েছেন।

An image of social media

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২০
Share: Save:

শরীরটা কি একটু গোলমাল করছে? সকালে ঘুম ভেঙে ওঠার পরে মাটিতে পা রাখতেই সব যেন কেমন দুলে উঠেছিল। তাই বছর তিরিশের যুবক ভেবেছিলেন, আগের রাতে নিমন্ত্রণ বাড়িতে খাওয়াদাওয়া একটু বেশি হওয়ায় শরীরটা বোধহয় ভাল নেই। কিন্তু ভুল ভাঙল খানিক পরেই। সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে ঢুকতেই দেখলেন এক জনের লেখা, ‘কেউ কি ভূমিকম্প টের পেয়েছেন?’

ধরিত্রী কেঁপে ওঠার এই মৃদু অনুভূতি নিয়েই শনিবার সকাল থেকে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ নিছকই মজা করেছেন। কেউ আবার অতি সামান্য হলেও নিজের অনুভূতি অন্যদের জানিয়েছেন। এ দিন সকাল ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ সামান্য কম্পন অনুভূত হয় কলকাতা, হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। পরে জানা যায়, কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে অসম ও ত্রিপুরাতেও। আবার প্রায় ওই একই সময়ে বাংলাদেশেও ভূমিকম্প হয়েছে বলে খবর। পূর্ব বঙ্গের লোকজনও অবশ্য এ বঙ্গের থেকে কম যান না সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে। সেখানেও ভূমিকম্প কোথায়, কতটা বোঝা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে তা নিয়েই আলোচনা চলছে সমাজমাধ্যমে।

তবে, এ দিন সমাজমাধ্যমের দৌলতেই এ বঙ্গের বেশির ভাগ মানুষ ভূমিকম্প সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন ব্যাঙ্কের কর্মী সুমিত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মাথাটা হঠাৎ করে কেন টলে গেল, তা নিয়ে চিন্তা বা উদ্বেগের অবসান ঘটিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। না-হলে তো সারা দিন চিন্তা করেই কেটে যেত।’’ যেমন, বেলঘরিয়ার বাসিন্দা পার্থপ্রতিম কুণ্ডু সকালে শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অনুভব করেন, তাঁর মাথা টলছে। এমনিতেই তাঁর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। সেটাই আবার চাগাড় দিল কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন প্রৌঢ়। সটান গিয়ে শুয়ে পড়েন বিছানায়। মিনিট কয়েক পরে উঠে রক্তচাপ মেপে দেখেন, সবই ঠিকঠাক। তা হলে গোলমালটা কোথায়? তখনই সমাজমাধ্যমে পরিচিতদের পোস্ট দেখে তিনি জানতে পারেন, খুব সামান্য হলেও কেঁপে উঠেছিল মাটি। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ওই কম্পনের সঙ্গে আমার মাথা টলে যাওয়ায় সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে।’’

হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্রের কথায়, ‘‘ঘুম ভাঙলেও বিছানায় শুয়ে ছিলাম। আচমকা খাটসুদ্ধ দুলে উঠলাম। এক বার নয়, দু’-দু’বার। ভয়ে বিছানা থেকে উঠে মেঝেতে দাঁড়ানোর পরে আর কিছু মালুম হয়নি। পরে শুনলাম, ভূমিকম্প হয়েছে।’’ অনেকে আবার বুঝতেই পারেননি যে, মাটি অল্প হলেও কেঁপেছে। হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি কিছু বুঝতে পারিনি। তবে, বাড়ির লোকজন বেশ ভাল ভাবেই অনুভব করেছে শুনলাম।’’ বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার বাসিন্দা সমরেশ ঘোষাল, সুব্রত সরকারেরা আবার থলি হাতে স্থানীয় বাজারে ঢুকে বুঝতে পারেন, শরীরটা কেমন যেন টলছে। কিন্তু তা যে ভূমিকম্প, তা জেনেছেন বাড়ি ফিরে।

ভূমিকম্প নিয়ে সকাল থেকে এ ভাবেই শহর ও পড়শি দুই জেলায় চলল দিনভর চর্চা। যা নিয়ে সমাজমাধ্যমে চলল বার্তা-পাল্টা বার্তার পালা। বালির বাসিন্দা রাজীব মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘খাটে শুয়ে কাগজ পড়ছিলাম। আচমকা দুলুনি মতো অনুভব করলাম। ভাবলাম, গিন্নি হয়তো বাজার যাওয়ার জন্য খাটে ধাক্কা দিচ্ছেন।’’ কিছু ক্ষণ পরেই কৌতূহলবশত সমাজমাধ্যমে ‘ভূমিকম্প হল কি?’ বলে প্রশ্ন করেছিলেন রাজীব। সঙ্গে সঙ্গেই আসতে থাকে উত্তর। শহর ও জেলার অনেকেই তড়িঘড়ি সমাজমাধ্যমে ঢুকে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করেছেন। জানতে চেয়েছেন, ভূমিকম্প টের পাওয়াটা তাঁদের মনের ভুল কি না?

কেউ কেউ আবার খানিক ক্ষণের মধ্যেই ইন্টারনেট ঘেঁটে বার করে ফেলেছেন, ভূমিকম্পের কেন্দ্র কোথায় ছিল ও তীব্রতা কতটা ছিল। সমাজমাধ্যমে সেই তথ্য দিয়ে বাকিদের আশ্বস্ত করতে তাঁরা লিখেছেন, ‘ভয় পাবেন না। খুবই সামান্য মাত্রায় হয়েছে’। তবে, মনের ভুল যে নয়, তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছে সমাজমাধ্যমই।

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media earthquake Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy