ফাইল চিত্র।
বছর ঘুরে যায়। কিন্তু চিনা মাঞ্জার বিপদ থেকে বাঁচতে উড়ালপুল ঘিরে ফেলার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না। অভিযোগ, এর জেরেই কাটে না চিনা মাঞ্জার (সিন্থেটিক মাঞ্জা দেওয়া নাইলনের সুতো) বিপদ। মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনায় পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রের গলায় শোনা গেল সেই চিনা মাঞ্জারই কথা। এই সুতোই যে এখন ট্র্যাফিক পুলিশের অন্যতম মাথা ব্যথা, তা বুঝিয়ে কমিশনারের আশ্বাস, কেএমডিএ-র সহযোগিতায় উড়ালপুল ঘিরে ফেলা হবে। প্রশ্ন, এ বারেও কি স্রেফ আশ্বাস হয়েই থেকে যাবে উড়ালপুলে বিপদের ফাঁদ?
সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘চিনা মাঞ্জা বড় সমস্যা। বিশেষ করে মা উড়ালপুলের উপরে। আমাদের অনুরোধে কেএমডিএ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে। এতে কিছু সাফল্য মিলেছে। তবে বলব না যে পুরোপুরি সাফল্য এসেছে। কেএমডিএ চেষ্টা করছে, উড়ালপুল জুড়ে ব্যারিকেড দিতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু মা-এ নয়, যে যে জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবটাই নজরে রাখছি।’’
যদিও এই আশ্বাস নতুন নয়। বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল। জাতীয় পরিবেশ আদালত প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছিল। ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল, সারা দেশে ওই ধরনের মাঞ্জা সুতো তৈরি, মজুত ও কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব সেই নির্দেশ কার্যকর করবেন। সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশের প্রধানকে ওই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠিয়ে চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে। এই সুতো বা মাঞ্জার উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নির্দেশিকা অমান্য করে কেউ চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো ব্যবহার করলে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন এবং ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।
গত বছরের ১৬ মে এজেসি বসু উড়ালপুলের উপরে মাঞ্জা সুতোয় গলা কেটে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। ওই বছর ২৮ মে বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার মুখে চিনা মাঞ্জায় এক প্রৌঢ়ের চোখ-মুখে গভীর ক্ষত হয়। ওই দু’টি দুর্ঘটনার পরে কড়েয়া, তিলজলা, তপসিয়া থেকে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। ড্রোনে নজরদারি এবং লিফলেটে প্রচার শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা না কমায় কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়, চিনা মাঞ্জা সুতোর দুর্ঘটনা এড়াতে কেএমডিএ-কে পুরো উড়ালপুল ঘিরে ফেলতে আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেও গত তিন মাসে কেবল মা উড়ালপুলেই ১৪ জন মোটরবাইক আরোহী চিনা মাঞ্জায় জখম হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছ’নম্বর গেটের সামনেই চিনা মাঞ্জা সুতোয় গলা কেটে আহত হন এক ব্যক্তি। শঙ্কর রায় নামের ওই ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন এত দিনেও উড়ালপুল ঘেরা হল না?
কেএমডিএ এবং পুলিশ জানিয়েছে, মা উড়ালপুলের দু’ধারে ২৫ ফুট উঁচু ফেন্সিং দিতে বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘পুরো উড়ালপুল ঘিরে ফেলার কাজ দ্রুত শুরু হবে।’’ এত দিনেও সেই কাজ হয়নি কেন, সেই উত্তর অবশ্য মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy