Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dangerous Houses In Pathuriaghata

নাছোড় ‘ভাড়াটেরা’, পাথুরিয়াঘাটার আশপাশেই ১০৮টি বিপজ্জনক বাড়ি

গত শুক্রবার ৮০/১ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে দু’জন আটকে রয়েছেন বলে খবর আসে। পুলিশ, পুরসভা, বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র কর্মীরা ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করেন।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৫৫
Share: Save:

এলাকায় কতগুলি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, দ্রুত রিপোর্ট আকারে তা জানাতে হবে পুরপ্রতিনিধিকে। শুক্রবার কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে দু’জনের আটকে থাকার ঘটনায় স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা সূত্রের খবর, এর পরেই ওই ওয়ার্ডে ১০৮টি বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিত হয়েছে। দ্রুত সেগুলি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে। যদিও গার্ডেনরিচ ও দমদমের ঘটনার পরে যেখানে পুর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে কেন আগেই বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে তৎপর হল না পুরসভা, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ি শহরের অন্যতম বড় সমস্যা। সাধারণ মানুষকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তবে শহরের বিপজ্জনক বাড়ি ধরে ধরে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিচ্ছি পুরপ্রতিনিধিদের।’’

গত শুক্রবার ৮০/১ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে দু’জন আটকে রয়েছেন বলে খবর আসে। পুলিশ, পুরসভা, বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র কর্মীরা ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করেন। তাঁদের মধ্যে এক জন, প্রভাদেবী সিংহের স্বামী দীননাথ সিংহের এ দিন দাবি, ‘‘প্রোমোটিংয়ের কাজে এমন ভাবে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে যে, বাড়ি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর স্ত্রীর বড় কোনও ক্ষতি হলে কে তার দায় নিত, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বিশ্বামিত্র উপাধ্যায় নামে আটকে থাকা অপর যুবক বলেন, ‘‘দিনকয়েক আগে একটি নোটিস ঝুলিয়েছে। কিন্তু বাড়ি যে ভেঙে পড়তে পারে, সেটা বুঝিনি।’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৮০/১ নম্বর বাড়িটির পাশেই ৮০/২ নম্বর বাড়িতে প্রোমোটিংয়ের কাজ চলছে। পাশে ৮০ নম্বর বাড়িটিও পুরনো। স্থানীয়দের দাবি, তিনটি বাড়ি আদতে একটিই। এক অবাঙালি ব্যবসায়ীর থেকে নামী নির্মাণ সংস্থা বাড়িটি কিনে নেয়। এর পরে শুরু হয় সেখানকার ভাড়াটেদের সঙ্গে দর কষাকষি। ওই নির্মাণ সংস্থা ভেঙে পড়া বাড়ির গায়ে নোটিসও ঝুলিয়েছে। তাতে লেখা, ‘কয়েকটি ভাড়াটে পরিবার অন্যত্র বসবাস করছে। তাদের থাকার দায়িত্ব নিয়েছে নির্মাণ সংস্থা। কিন্তু কয়েকটি পরিবার বার বার বলা সত্ত্বেও বিপজ্জনক বাড়ি ছাড়েনি। নির্মাণ সংস্থা এ নিয়ে চিন্তিত। নির্মাণকাজ শুরু হলে এই বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে। তাই দ্রুত এই কয়েকটি পরিবারও অন্যত্র যাক, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।’ অন্যত্র বসবাসের খরচ নির্মাণ সংস্থাই দেবে বলে নোটিসে উল্লেখ রয়েছে। তবু বাড়ি ফাঁকা হয়নি কেন?

স্থানীয় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরার দাবি, ‘‘নির্মাণ সংস্থা তিনটি ঠিকানার সব ক’টি বাড়ি কেনার পরে ভাড়াটেরা নানা দাবি তোলেন। নির্মাণ সংস্থাটি প্রায় সমস্ত দাবি মিটিয়েছে। কিছু পরিবার অন্যত্র চলে গেলেও কয়েকটি পরিবার বাড়ি ছাড়তে রাজি হয়নি। চারটি পরিবার ভেঙে পড়া বাড়িটিতে ছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরিবারগুলি আদতে ভাড়াটের ভাড়াটে। ফলে ভয়ে রয়েছে, উঠে গেলে আর জায়গা পাবে না। আদতে ভাড়াটে যাঁরা, তাঁরাও উঠতে নিষেধ করছেন। নিজের ঘর ভাড়ায় দিয়ে ভাল জায়গায় উঠে গিয়েছেন, তাই এই ভাড়াটেরা উঠে গেলে ভাড়া বন্ধ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন।’’

২০১৬ সালে এমনই উপায় না দেখে পুরপ্রতিনিধির কাছে যান ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের পুরনো বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দারা। তাঁর অফিস ঘুরে ফিরে আসার পরেই বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় দু’জনের। ফলে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দাদের বড় অংশের আশঙ্কা, ফের একই রকম ঘটনা ঘটবে না তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Tenant Old house Dangerous Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy