Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

শহর পরিচ্ছন্ন রাখুন নিজেরাই, বার্তা দিল শিখদের মিছিল

রবিবার দুপুরে বড়বাজার থেকে বেরিয়েছে ধর্মীয় মিছিল। কয়েক হাজার মানুষ হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় ফুল ফেলছেন। কেউ বা গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন সরবতে। তার পরে সেই গ্লাস পড়ে থাকছে রাস্তার উপরেই। শুধু ধর্মীয় মিছিল কেন, শহরের যে কোনও অনুষ্ঠান, মিছিলেই এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত মহানগরবাসী। কিন্তু এ দিনের মিছিল সেই পরিচিত ছবিটাকে অনেকটা বদলে দিয়েছে! কী রকম? বড়বাজার থেকে বেরোনো শিখদের ওই মিছিলে একদল স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। মিছিল চলতে চলতেই তাঁরা কুড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবহৃত গ্লাস, ফুল। শুধু নিজেদের ফেলা জঞ্জালে থেমে থাকেননি ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা।

মিছিলের মধ্যেই চলছে রাস্তা সাফাই। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

মিছিলের মধ্যেই চলছে রাস্তা সাফাই। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share: Save:

রবিবার দুপুরে বড়বাজার থেকে বেরিয়েছে ধর্মীয় মিছিল। কয়েক হাজার মানুষ হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় ফুল ফেলছেন। কেউ বা গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন সরবতে। তার পরে সেই গ্লাস পড়ে থাকছে রাস্তার উপরেই।

শুধু ধর্মীয় মিছিল কেন, শহরের যে কোনও অনুষ্ঠান, মিছিলেই এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত মহানগরবাসী। কিন্তু এ দিনের মিছিল সেই পরিচিত ছবিটাকে অনেকটা বদলে দিয়েছে! কী রকম?

বড়বাজার থেকে বেরোনো শিখদের ওই মিছিলে একদল স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। মিছিল চলতে চলতেই তাঁরা কুড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবহৃত গ্লাস, ফুল। শুধু নিজেদের ফেলা জঞ্জালে থেমে থাকেননি ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা। কুড়িয়ে নিয়েছেন রাস্তার অন্যান্য জঞ্জালও। তাঁদের বক্তব্য, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘স্বচ্ছ ভারত, সবুজ ভারত’-এর ডাক দিয়েছে, তা দেখেই আরও উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন তাঁরা।

এ দিনের মিছিল দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একটি ধর্মীয় সংগঠনের সদস্যরা যদি শহরের পরিচ্ছন্নতায় এমন কর্মসূচি নিতে পারেন, তা হলে নিত্য দিন মিছিল করা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা এমনটা নেন না কেন?

নাগরিকদের বক্তব্য, শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিত্য দিন মিটিং-মিছিল লেগেই থাকে। তার জেরে শহর ছাড়াও শহরতলি ও জেলা থেকে প্রচুর মানুষ এসে হাজির হন। মিছিল-সমাবেশ শেষে দেখা যায়, তাঁদের ব্যবহৃত খাবারের প্লেট, জলের গ্লাস-সহ নানা জঞ্জালে ঢেকে গিয়েছে ধর্মতলা, ময়দান চত্বর। নোংরা জমে মিছিলের রাস্তাগুলিতেও। পুরসভা কিছু এলাকা পরিষ্কার করলেও অনেক সময়েই সাফাইয়ের কাজ পুরোপুরি হয় না।

পরিবেশবিদেরা অনেকেই বলছেন, নিত্য দিন সমাবেশ, মিছিলের জেরে শহরে জঞ্জালের পরিমাণ বাড়ে। তা থেকে শুধু পরিবেশই দূষিত হয় না, নানা ধরনের রোগজীবাণুর প্রকোপও বাড়ে। সাধারণত শহরে এই ধরনের নোংরা সাফাইয়ের দায়িত্ব পুরসভার। কিন্তু শুধু পুরসভা নয়, পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও জরুরি।

এ দিন শিখদের ধর্মীয় মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা সতনাম সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলছেন, “এই সচেতনতা থেকেই এ দিনের মিছিলে পরিচ্ছন্নতার বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ফি বছর ধর্মীয় আচার মেনেই রাস্তা ঝাঁট দেওয়া হয়। আজ তার সঙ্গে রাস্তার নোংরা পরিষ্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।”

এ দিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলছেন, “দেশকে পরিচ্ছন্ন করতে এমন ছোট ছোট উদ্যোগই বড় হয়ে দাঁড়াবে। আজকের উদাহরণ দেখে আমাদের সবারই শেখা উচিত।”

একই মত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তেরও। এক সময়ে ময়দানে শিখদের অনুষ্ঠানে উনুন জ্বালিয়ে রান্না হতো। তার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ দিন শিখদের ধর্মীয় মিছিলে পরিচ্ছন্নতার এই প্রয়াসের কথা জেনে সুভাষবাবু যথেষ্টই আনন্দিত। তিনি বলছেন, “এই পরিচ্ছন্নতার প্রয়াস রাজনৈতিক দলগুলির শেখা উচিত।”

শহর সাফ রাখার দায়িত্ব যাঁদের, সেই কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও খুশি। তিনি বলেন, “কলকাতা শহরে এটাই কাম্য। আমাদের সাফাইকর্মীরা রয়েছেন। কিন্তু তার পাশাপাশি যদি নাগরিকেরাও এ ভাবে এগিয়ে আসেন, তা হলে কলকাতা সুন্দর থেকে সুন্দরতর হবে।” এ দিনই উত্তর কলকাতার এক জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনেও রাস্তা ঝাঁট দিতে দিতে যান শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা।

কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা?

এ দিনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েও সিপিএম নেতা রবীন দেবের বক্তব্য, “আমরা বহু দিন ধরে পরিচ্ছন্নতার পক্ষে। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কর্মসূচিও করেছি। এখন মোদী ডাক দিয়েছেন বলেই সামিল হব, এমনটা নয়।”

কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই পরিচ্ছন্নতার প্রয়াস সবার শেখা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও এটা একটা উদাহরণ হতে পারে। তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলিতে পরিচ্ছন্নতা একটা বড় বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির (পড়ুন, বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী) কৃতিত্ব নেই।”

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিখ সংগঠন যে কাজ করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই সংস্কৃতি ও চেতনা রাজনৈতিক দলেরও থাকা উচিত। ব্রিগেডের মতো সমাবেশে আমরা মাঠ পরিষ্কার করে দিই। তবে একটি ধর্মীয় সংগঠন যে ভাবে করসেবার মারফত দ্রুত এই কাজ করতে পারে, অন্যদের পক্ষে ততটা না-ও সম্ভব হতে পারে। কিন্তু এই সচেতনতা জরুরি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy