Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
tea stall

ঘুরে দাঁড়াতে চায়ের দোকানই ভরসা মিম-খ্যাত সেই ‘চা-কাকু’র

যাদবপুর সংলগ্ন বিজয়গড়ের শ্রীকলোনি বাজার। সেখানেই বাড়ির সামনে তিন ফুট বাই তিন ফুটের ছোট্ট দোকান ‘চা-কাকু’ মৃদুলবাবুর।

চা-চর্চা: বিজয়গড়ে নতুন চায়ের দোকানে মৃদুল দেব। বুধবার।

চা-চর্চা: বিজয়গড়ে নতুন চায়ের দোকানে মৃদুল দেব। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৩
Share: Save:

রাস্তায় বেরিয়েছেন কেন? গত বছর ‘জনতা কার্ফু’ চলাকালীন চা খেতে বাইরে বেরিয়ে এক তরুণীর এমনই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তিনি। উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘আমরা কি চা খাব না? খাব না আমরা চা?’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সেই ভিডিয়ো।

যদিও করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে চা খেতে বেরোনোয় নেট-নাগরিকদের বিদ্রুপও কম শুনতে হয়নি তাঁকে। তাঁর ওই প্রশ্নটিকে নিয়ে তৈরি হয়ে যায় অসংখ্য মিম। ‘চা-কাকু’ বলে পরিচিত হয়ে যান শ্রীকলোনির বাসিন্দা মৃদুল দেব। এ বার মৃদুলবাবু নিজেই খুলে ফেললেন একটি চায়ের দোকান।

যাদবপুর সংলগ্ন বিজয়গড়ের শ্রীকলোনি বাজার। সেখানেই বাড়ির সামনে তিন ফুট বাই তিন ফুটের ছোট্ট দোকান ‘চা-কাকু’ মৃদুলবাবুর। দিন দুয়েক আগেই পান, চিপস, চকলেট ও বিড়ি-সিগারেটের পসরা সাজিয়ে দোকানের উদ্বোধন করেছিলেন। তবে চা ছিল না। বুধবার থেকে চা-ও তৈরি করছেন। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে নিজের দোকানের ছবি দিয়েছেন মৃদুলবাবু। চা খাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন সকলকে। এ দিন তিনি বললেন, ‘‘ভাবলাম, সকলের কাছে যখন ‘চা-কাকু’ বলেই পরিচিত হয়েছি, তা হলে চায়ের দোকানই খুলে ফেলি। তা ছাড়া, অন্য কিছু করার মতো পুঁজিও ছিল না!’’

করোনা পরিস্থিতির আগে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসেবে কাজ করতেন মৃদুলবাবু। লকডাউনে কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ জনের সংসার চালানোটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এলাকার সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হন তিনি। মিমি ফিরিয়ে দেননি। মাঝেমধ্যেই ডেকে সাহায্য করেছেন। আস্তে আস্তে কিছু টাকা জমিয়ে একটি দোকান খোলার পরিকল্পনা করেন মৃদুলবাবু। টাকার অভাবে বড় কিছু করার উপায় ছিল না। তাই দু’হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়ির সামনেই চায়ের দোকান খোলেন তিনি। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘পয়সার অভাবে দোকানে সাইনবোর্ডও লাগাতে পারিনি। ভেবেছি, দোকানের নাম রাখব চা-কাকু।’’

বিক্রিবাটা কেমন হচ্ছে? মৃদুলবাবুর উত্তর, ‘‘অনেকেই আসছেন, ছবি তুলছেন, ভিডিয়ো করছেন। তবে কড়াকড়ি চলছে তো, দূর থেকে কেউই আসতে পারছেন না। প্রথম দিনে পাঁচশো টাকার মতো ব্যবসা হয়েছে।’’ আপাতত পাঁচ ও দশ টাকার চা পাওয়া যাচ্ছে মাটির ভাঁড়ে। আগামী দিনে আরও বড় কিছু করার পরিকল্পনা আছে তাঁর। মৃদুলবাবুকে দোকানে সাহায্য করছেন তাঁর ছেলে। মৃদুলবাবুর কথায়, ‘‘অনেকেই ফোন করেছেন। কিন্তু করোনার জন্য সকলে আসতে পারছেন না। করোনা আর একটু কমলে স্পেশ্যাল চা বানাব।’’

এ দিন মোটরবাইক নিয়ে ‘চা-কাকু’র দোকানে এসেছিলেন এক দম্পতি। চা খেতে খেতে বেলেঘাটার বাসিন্দা সুজয় ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছিলাম ওঁকে। কাল শুনলাম, উনি চায়ের দোকান দিয়েছেন। তাই চলে এলাম।’’

নিজে করোনার মধ্যে বাইরে বেরিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। এখন তাই কেউ মাস্ক ছাড়া এলে তাঁকে জিনিস বিক্রি করছেন না মৃদুলবাবু। সকলকেই পরামর্শ দিচ্ছেন ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য। মৃদুলবাবুর কথায়, ‘‘ব্যবসা বাড়াতে দোকানের সামনে এসে ভিড় করতে বলব না আমি। আপাতত সকলকেই সাবধানে থাকতে হবে। ব্যবসা তো পরেও করা যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE