Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Education

মূলস্রোতের স্কুলে যাচ্ছে বন্দিনী মায়ের সন্তানেরা

কারান্তরালে মায়ের সঙ্গী ছোটদের স্কুলশিক্ষার বন্দোবস্তও তখন করতে বলে বম্বে হাই কোর্ট। কিছু দিন হল এ রাজ্যে ‘জেলশিশুদের’ শৈশবের চেহারাটা একটু হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে।

A Photograph of a classroom

কলকাতার আলিপুর মহিলা জেল এবং কৃষ্ণনগর জেলের আবাসিক খুদের দল সংশোধনাগারের বাইরে মুক্ত পৃথিবীর স্কুলে যেতে শুরু করেছে। প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৬
Share: Save:

মায়ের সঙ্গে গারদের ও-পারে বন্দি শিশুদের শৈশব সুরক্ষিত রাখার দায় এড়াতে পারে না কারা দফতর তথা রাষ্ট্র। এ কথা মনে করিয়ে একটি বিখ্যাত মামলায় বন্দিনী মায়ের সঙ্গে থাকা খুদেদের আর পাঁচটি বাচ্চার মতোই লালনপালনের কথা বলেছিল বম্বে হাই কোর্ট। সেটা বছর ছয়েক আগের কথা। কারান্তরালে মায়ের সঙ্গী ছোটদের স্কুলশিক্ষার বন্দোবস্তও তখন করতে বলে বম্বে হাই কোর্ট। তবে, নানা জটিলতায় এর সবটা হাতেকলমে করে দেখানো সর্বত্র সম্ভব হয়নি। কিছু দিন হল এ রাজ্যে ‘জেলশিশুদের’ শৈশবের চেহারাটা একটু হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে।

ছ’-সাত মাস হল, কলকাতার আলিপুর মহিলা জেল এবং কৃষ্ণনগর জেলের আবাসিক খুদের দল সংশোধনাগারের বাইরে মুক্ত পৃথিবীর স্কুলে যেতে শুরু করেছে। রাজ্য কারা দফতরের ডিআইজি অরিন্দম সরকার বলেন, “জেলে থাকলেও বাচ্চারা বন্দি নয়। তাদের স্কুলে পাঠানো তাই জরুরি। তবে নিরাপত্তার দিকটাও খেয়াল রাখার কথা। সংশোধনাগারে বন্দিদের নৃত্যশিক্ষার তালিমের শরিক অলকানন্দা রায়ও বাচ্চাদের বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করছিলেন। ওঁর সাহায্যেই ছোটদের তিনটি স্কুলে ভর্তি করা হয়।”

অলকানন্দা নিজে জেলের ভিতরে ‘হার্টপ্রিন্ট’ নামের একটি স্কুল গড়েছেন। সেখানে এখনও ছোটরা পড়াশোনা করে, খেলে। কিন্তু শুধুমাত্র জেলের ভিতরের পৃথিবীতে আটকে রাখা ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয় বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। কলকাতা হাই কোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটির সদস্য-সচিব, বিচারপতি সৌমেন সেনের কাছেও অলকানন্দা মায়ের সঙ্গে জেলে থাকা শিশুদের অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন।ডিআইজি জানান, আলিপুর জেলের আবাসিক বন্দিনীদের জনা ১৫ ছেলেমেয়েকে কলকাতার তিনটি স্কুল— ফিউচার হোপ, হোপ ফাউন্ডেশন, মন গ্রেস মন্টেসরি হাউসে ভর্তি করা হয়। তারা তিন থেকে পাঁচ বছরের। একেবারে ছোট কয়েকটি বাচ্চা এখনও স্কুলে যাওয়ার মতো বড় হয়নি। এমনিতে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত ছোটরা মায়ের সঙ্গে জেলে থাকতে পারে। আর একটু বড় হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের পড়াশোনা ও থাকার বন্দোবস্ত হবে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি। কৃষ্ণনগর জেলের সুপার পৃথা সিংহও জানান, চারটি বাচ্চাকে ঘূর্ণী প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। জেলের কর্মীরাই বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছেন। কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাতায়াতের গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছে আলিপুরে।

সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে বাচ্চাদের খুঁটিনাটি পরিচয় গোপন রাখা দস্তুর। একটি স্কুলের কর্ণধার সুজাতা সেন বলেন, “অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশা, পড়া বা খেলাধুলোয় জেলে থাকা ছোটদের ফারাক নেই। পদে পদে দেখা যাচ্ছে, ওরা কারও থেকে কম নয়।”

সংশোধনাগারের আবাসিকদের অধিকার রক্ষা কর্মী তথা সুপ্রিম কোর্টের গড়া জেল সংক্রান্ত কমিটির সদস্য স্মিতা চক্রবর্তীর কথায়, “ছ’বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মায়ের সঙ্গে থাকার অধিকার জেতাটাও জরুরি ছিল। তবে, আজন্ম শুধু সংশোধনাগারের ভিতরে থাকলে ছোটরা গরু, ট্যাক্সি দেখেও ভয় পায়। বাচ্চাদের স্কুলের পাঠানোটা তাই রাজ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

অন্য বিষয়গুলি:

Child Education Imprisoned alipore jail West Bengal government Prisoners
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy