Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona

সংক্রমিতের সংখ্যার ‘নিঃশব্দ বৃদ্ধি’ এখন আশঙ্কার

কেউ এক বার সংক্রমিত হলে তাঁর আবারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে সার্স-কোভ-২-এর এই পি.১ ভ্যারিয়েন্ট।

বেপরোয়া: হাওড়ার এক বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে মিঠুন চক্রবর্তীর রোড শোয়ে দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখে সমর্থকদের ভিড়। শুক্রবার, ডুমুরজলায়।

বেপরোয়া: হাওড়ার এক বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে মিঠুন চক্রবর্তীর রোড শোয়ে দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখে সমর্থকদের ভিড়। শুক্রবার, ডুমুরজলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৫
Share: Save:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও তার পরবর্তী সময়ে যে বিভিন্ন সব স্ট্রেন এসেছে, সেগুলির থেকে বর্তমান করোনাভাইরাসের স্ট্রেনের সংক্রামক ক্ষমতা প্রায় ২.২ গুণ বেশি। এবং কাউকে পুনরায় সংক্রমিত করার জন্য এই স্ট্রেন আগের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেশি সক্ষম। অর্থাৎ, কেউ এক বার সংক্রমিত হলে তাঁর আবারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে সার্স-কোভ-২-এর এই পি.১ ভ্যারিয়েন্ট। গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশে এখনও এই স্ট্রেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও যে দু’টি স্ট্রেনের মাধ্যমে বর্তমানে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে দেশে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সব স্তরের আলোচনার বৃত্তে করোনা ছিল। যার ফলে সাধারণ মানুষের একাংশ তবু কিছুটা নিয়ম মানতেন। কিন্তু সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়া মাত্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মধ্যে এই বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয় যে, করোনার সংক্রমণ আপাতত কমে গিয়েছে। তাই সতর্কতার আব্রুও খসে পড়েছে মুহূর্তে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘ঝড়ের আগে যেমন পরিবেশ আপাত ভাবে শান্ত হয়ে যায়, তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গত তিন-চার মাসে। কিন্তু পরিসংখ্যান লক্ষ করলে দেখা যাবে, কী ভাবে প্রতিদিন নতুন কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’ এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্টের উল্লেখ করছেন গবেষকেরা। যেখানে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর, সিকিম ও ত্রিপুরা ছাড়া দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই যদি ধরা হয়, তা হলে দেখা যাবে, গত পয়লা অক্টোবর যেখানে রাজ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬,৫৫২ (যা তার আগের দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২২০ জন বেশি), সেখানে পয়লা জানুয়ারি, ২০২১-এ অ্যাক্টিভ রোগী ১১,৬১৬ (যা ৩১ ডিসেম্বরের তুলনায় ৩৬৯ জন কম)। তার তিন মাস পরে, অর্থাৎ ১ এপ্রিল রাজ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫১৩। যা ৩১ মার্চের থেকে ৭৩৮ জন বেশি! অর্থাৎ, গত ছ’মাসের মধ্যে মাসের প্রথম দিনের নিরিখে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা সর্বাধিক। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, পয়লা নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ, শুধু এই পাঁচ মাসের প্রথম দিনের হিসেব বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, প্রতি বারই করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র নিম্নগামী ছিল। ব্যতিক্রম শুধু পয়লা এপ্রিল।’’

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদারের কথায়, ‘‘করোনায় আক্রান্ত অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার নিঃশব্দ বৃদ্ধিই এখন সব চেয়ে আশঙ্কার। কারণ, দৈনিক যখন বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছিলেন, তা নিয়ে তবু আলোচনা-সতর্কতা ছিল। কিন্তু চোখের আড়ালে যে ভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ফের পূর্বের অবস্থা ফেরার আশঙ্কা রয়েছে।’’ অনেকের মত, নির্বাচনের জনসমাবেশ, করোনা-বিধি না মানা সেই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এল এম শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘এখনও সতর্ক না হলে দ্রুত সেই পরিস্থিতি আসতে চলেছে, যেখানে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির জন্য ফের হাহাকার পড়ে যাবে।’’

কিন্তু নির্বাচনের বাদ্যিতে সেই হাহাকার ঢাকা পড়ে যাবে না তো? সেটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

WHO Corona Covid Protocol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy