প্রাচীন: ঊনবিংশ শতাব্দীর এই চুল্লি সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণকাজের পরিকল্পনা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
তখন কলকাতায় শব শুধুই কাঠে দাহ করা হত। বৈদ্যুতিক চুল্লি আসেনি। রাস্তাঘাটে আলোও জ্বলত গ্যাসেই। গ্যাস যদি রাস্তা আলোকিত করতে পারে, তা হলে সেই গ্যাসের সাহায্যে শবের সৎকার করা যাবে না কেন? এ রকমই ভাবনা থেকে ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতার মল্লিকবাজারের খ্রিস্টান কবরস্থানের পিছনে গ্যাস চুল্লি বসানোর তোড়জোড় শুরু হল।
মৃতদেহ সৎকারের সেই গ্যাস চুল্লিটি এখন সঙ্কটের মুখে। নথি বলছে, গ্যাসের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই চুল্লি থমকে যায় বিংশ শতকের সত্তরের দশকের শেষে। মল্লিকবাজারের ক্রিমেটোরিয়াম স্ট্রিটে ইতিহাস বহন করা সেই গ্যাস চুল্লি অস্তিত্বের লড়াই করছে। অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওই ঐতিহ্যশালী চত্বরে হতে চলছে অন্য নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যেই যার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনিক স্তরে চিঠি লেখালেখি শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশ স্থাপত্যের সেই গ্যাস চুল্লির ঘরের দেওয়াল টপকে শুধু চুল্লির লোহার পাত চুরিই নয়, অভিযোগ উঠেছে, ওই চত্বরের ফাঁকা জায়গায় নির্মাণকাজের পরিকল্পনা চলছে। ক্রিশ্চিয়ান বেরিয়াল বোর্ডের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ঐতিহাসিক গ্যাস চুল্লিটিকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছে তারা। ওখানে যেন কোনও নির্মাণ না হয়, তার আর্জি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেও। কিন্তু তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না ক্রিশ্চিয়ান বেরিয়াল বোর্ড।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ইউরোপীয় স্থাপত্যের ওই গ্যাস চুল্লির আশপাশে রয়েছে অনেকটা ফাঁকা জমি। সেখানে ঝোপজঙ্গল হয়ে ও আবর্জনার স্তূপ জমে বেহাল অবস্থা। গ্যাস চুল্লিটি যে কংক্রিটের স্থাপত্যের মধ্যেরয়েছে, তার সিমেন্টের দেওয়াল ফাটিয়ে নেমেছে অশ্বত্থ গাছের শিকড়। এখনও সেই গ্যাস চুল্লির ভগ্নাবশেষ দেখলে বোঝা যায়, কতটা বৈজ্ঞানিক ভাবে সেটি তৈরি হয়েছিল। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছে যেত ওই চুল্লিতে। প্যারিস থেকে আনানো সেই গ্যাস চুল্লির দেওয়ালের লোহার পাতের কিছু অংশ উধাও। চুল্লির বাইরে যেখান থেকে মানুষ তাঁদের প্রিয়জনের দাহকাজ দেখতেন, সেখানের লোহার রেলিংও উধাও। এ সব নিয়ে বার বার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলেই জানানো হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ান বেরিয়াল বোর্ডের তরফে।
ক্রিশ্চিয়ান বেরিয়াল বোর্ডের এগ্জিকিউটিভ সাম্মানিক সদস্য রণজয় বসু বলেন, “এখানে জগদীশচন্দ্র বসুর শেষকৃত্য হয়েছিল। সুখলতা রাও, নেলি সেনগুপ্তের মতো ব্যক্তিদের দাহ করা হয়েছে এই গ্যাস চুল্লিতে। জগদীশচন্দ্র বসুর শেষকৃত্যের সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন এখানে। তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। ঐতিহাসিক এই গ্যাস চুল্লি ও তার ইমারত কেন হেরিটেজ তকমা পাবে না? কেন এই গ্যাস চুল্লির চত্বরে নির্মাণকাজ হবে?’’
শহরের এই ঐতিহ্যের রক্ষায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে অনুরোধ করেছেন বলে জানালেন রণজয়। তাঁর কথায়, ‘‘একে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার জন্য হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছি।” এই ঐতিহ্যের রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসক শঙ্কর নাথ। তাঁর আফশোস, “অন্য শহর হলে টিকিট কেটে পর্যটকেরা এই ঐতিহ্য দেখতে আসতেন।”
কলকাতা পুরসভার ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওই গ্যাস চুল্লিটি। অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর কাইজ়ার জামিল জানাচ্ছেন, ওই চুল্লি লাগোয়া একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল তৈরি করতে চান তিনি। তাঁর দাবি, “ঘেরা জায়গার ভিতর চুল্লির ইমারতের পাশে অনেকটা জায়গা পড়ে আছে। আমরা সেখানেই মোবাইল হাসপাতাল তৈরি করতে চাই। তার জন্য আবেদনও করেছি।”
প্রশ্ন, ঘেরা এলাকার ভিতর ফাঁকা জায়গা-সহ গ্যাস চুল্লির ভবন পুরোটাই তো ঐতিহাসিক স্থান। ওখানে নির্মাণকাজের পরিকল্পনা কি করা সম্ভব?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy