Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Murder Case

প্রৌঢ়া-খুনে কিশোর ও কিশোরীকে সাবালক হিসাবে বিচারের আবেদন জানাবে পুলিশ

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৬ জুন রাতে পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁদেরই মেয়ে খুন করে বলে দাবি প্রৌঢ়ের। কিন্তু মেয়ে তাঁকেও হুমকি দেওয়ায় সে কথা কাউকে জানাতে পারেননি তিনি।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৯
Share: Save:

রোগা, শীর্ণ চেহারা। গাল ভর্তি কাঁচা-পাকা দাড়িতেও অযত্নের ছাপ। পোশাক ঠিক করতে করতে প্রৌঢ় যখন দোতলা বাড়ির বাইরের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালেন, তখন দুপুর দেড়টা পেরিয়ে গিয়েছে। এক দিন আগেই তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে তাঁর মেয়ে এবং তার সঙ্গী, বছর সতেরোর এক কিশোরকে আটক করেছে ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ। প্রাণভয়ে খুনের কথা দেড় মাসেরও বেশি সময় গোপন রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রৌঢ়।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৬ জুন রাতে পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁদেরই মেয়ে খুন করে বলে দাবি প্রৌঢ়ের। কিন্তু মেয়ে তাঁকেও হুমকি দেওয়ায় সে কথা কাউকে জানাতে পারেননি তিনি। মঙ্গলবার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রৌঢ় বললেন, ‘‘ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিলাম। কাউকে কিছু জানালে খুন করে দেবে বলে ভয় দেখাত। কিন্তু আমি আর থাকতে না পেরে প্রতিবেশীদের খুনের কথা বলে দিই।’’ তবে, ঘটনাটি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুধু বছর চোদ্দোর মেয়ের ভয়েই প্রৌঢ় কাউকে কিছু জানাননি, না কি এর মধ্যে অন্য কোনও দিক রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ দিন প্রৌঢ় জানান, ১৪ বছর আগে মধ্যমগ্রাম থেকে দত্তক নিয়ে এসেছিলেন মেয়েকে। তখন তার তিন-চার দিন বয়স। বর্তমানে স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে সে। তিনি বলেন, ‘‘২০০০ সালে বিয়ের বছর দুই পরে আমাদের ছেলে হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালেই সে মারা যায়। তার পরে সন্তান না হওয়ায় দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’ জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগে ওই নাবালিকা দত্তক নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। সে কথা শোনার পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। পরে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। তার পর থেকে পরিবারের সকলের সঙ্গে সে খারাপ ব্যবহার শুরু করে বলে জানান প্রৌঢ়। ওই সময়েই ফেসবুকে তার আলাপ হয় ছেলেটির সঙ্গে। তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আপত্তি ছিল প্রৌঢ়ের স্ত্রীর।

ঠাকুরপুকুর থানা এলাকায় দোতলা বাড়ির উপরের তলায় একটি ঘরে থাকতেন স্বামী-স্ত্রী। পাশের ঘরেই থাকত মেয়ে। নীচের তলায় সপরিবার থাকেন প্রৌঢ়ের এক আত্মীয়। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘কোথায় গেটের চাবি থাকত, জানত মেয়ে। ৬ জুন রাত দুটো-আড়াইটে নাগাদ গেট খুলে ওর বন্ধুকে ঘরে ঢোকায়। এর পরে বালিশ চাপা দিয়ে মাকে খুন করে।’’ অভিযোগ, পরে পাড়ার এক চিকিৎসককে ডেকে এনে মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে মায়ের শেষকৃত্যও করে দেয় মেয়েই।

লালবাজার সূত্রের খবর, তদন্তে ধোঁয়াশা কাটাতে ইতিমধ্যেই প্রৌঢ়ের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আবার কথা বলা হবে। এ দিন দোতলার ঘরটি তালাবন্ধ করে দেন তদন্তকারীরা। অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ময়না তদন্ত না করেই চিকিৎসক কী ভাবে শংসাপত্র দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ওই কিশোর-কিশোরী নাবালক হলেও সাবালক হিসাবে বিচারের আবেদন জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।

এই ঘটনায় অপরাধমনস্কতা কাজ করেছে বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘শুধু রাগ বা ক্ষোভ থেকে এমন হতে পারে না। অপরাধের পরিকল্পনা ও পরে তা সংগঠিত করার মধ্যে অপরাধমনস্কতা কাজ করেছে। প্রাথমিক ভাবে ‘অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার’ বলে মনে হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Juvenile Thakurpukur police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy