কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের এজলাসে তরজায় জড়াল পুলিশ এবং পুরসভা। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে পুরসভার অভিযোগ, নারকেলডাঙার একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারকে রীতিমতো ধমক দিয়েছেন নারকেলডাঙা থানার ওসি। পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, অসহযোগিতা করা হয়নি। বরং পুরসভাই আদালতকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ এবং পুরসভার বক্তব্য শুনে বিচারপতি নির্দেশ দেন, আজ, শনিবার থেকে ওই বহুতল ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে। বাড়ির একতলায় থাকা হোটেল খালি করে দিতে হবে।
আদালত ওই বহুতল ভাঙার নির্দেশ দিলেও পুলিশ সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেছিল পুরসভা। পুলিশও রিপোর্ট দিয়ে আদালতে জানিয়েছিল, তারা ওই নির্মাণ ভাঙতে সক্ষম নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নারকেলডাঙা থানার ওসি-কে এ দিন সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। এ দিন পুলিশের কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, পুরসভা আদালতকে বিপথে চালিত করেছে। বেআইনি নির্মাণ আগেই খালি করা হয়েছে। নির্মাণের ভিতরের অংশ ভাঙার কাজ জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। পুরসভার আইনজীবী দেবজিৎ মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, পুলিশ হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, এই কাজ করতে থানা সক্ষম নয়। আদালত ওসি-কে তলব করার পরে পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে থানায় ডেকে শাসানো হয়েছে।
এ দিন সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার আদালতে ছিলেন। তাঁকে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনাকে কি থানায় ডেকে শাসানো হয়েছে?’’ ইঞ্জিনিয়ার এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘আমাকে থানায় ডেকে বলা হয়েছে, রমজান মাস চলছে এবং ভোট এসে গিয়েছে। তাই ওই বাড়ি ভাঙতে ফোর্স দেওয়া যাবে না।’’ তবে লিখিত নয়, পুরো বিষয়টি মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে বলেও ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেন। এর পরেই ছ’তলা বাড়িটি ভাঙার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সাম্প্রতিক অতীতে বিচারপতি অমৃতা সিংহ একাধিক নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি পদে থাকাকালীন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যত খড়্গহস্ত ছিলেন। তদুপরি, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে বিচারপতি অমৃতা সিংহ স্পষ্ট ভাবেই জানান যে, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আদালত চোখ বুজে থাকবে না এবং অনমনীয় অবস্থান নেবে। চলতি সপ্তাহেই একাধিক মামলায় কড়া পদক্ষেপ করেছেন তিনি। হাওড়ার একটি বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারকে এক কোটি টাকা জরিমানাও করেছেন।
এ দিন পুলিশ এবং পুরসভার যে তরজা কোর্টে দেখা গিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের অনেকেই বলছেন, বেআইনি নির্মাণের পিছনে পুর প্রশাসন এবং পুলিশ, উভয়েরই একাংশ মদত দেয়। তা না হলে এ ভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো বেআইনি নির্মাণ গজিয়ে উঠতে পারত না। বর্তমানে আদালতের কঠোর মনোভাব দেখে একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলার চেষ্টা করছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy