বাড়িতে শামীর ও জাওয়ারিয়া। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
তাঁর ইচ্ছে, দুর্গাপুজো দেখার। শাড়ি পরে ঘুরতে চান কলকাতার পুজো মণ্ডপে।
পার্ক সার্কাসের কাছে সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ে একতলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হয়ে করাচির কনে জাওয়ারিয়া আপাতত সেই স্বপ্নই দেখছেন। তবে, তার আগে সব চেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে। সেই প্রশ্ন উঠতেই বলে উঠলেন, ‘‘ইনশাল্লাহ, ভিসা মিল জায়েগি।’’
৪৫ দিনের ভিসা সম্বল করে পঞ্জাবের আটারি সীমান্ত পেরিয়ে, অমৃতসর হয়ে, মঙ্গলবার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন পাকিস্তানের নাগরিক, বিপিও কর্মী জাওয়ারিয়া খানম। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হতে আইনি জটিলতার সমাধানে তিনি বুধবার সকাল থেকে হবু স্বামী শামীর খানের সঙ্গে দিনভর কাটিয়েছেন দূতাবাসে। শামীর নিজেও হবু স্ত্রীর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায়। তবে আশা করছেন, যে ভাবে জাওয়ারিয়াকে নিজের কাছে দুই দেশের নিয়ম মেনে নিয়ে এসেছেন, সেই ভাবেই আদায় করে নেবেন বর্ধিত ভিসাও। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা সিটি অব জয়। স্ত্রীকে নিয়ে এখানেই থাকার পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বন্ধুবান্ধব বিয়েতে যোগ দিতে আসবেন। অনেক দিন অপেক্ষা করেই জাওয়ারিয়ার ভিসা মঞ্জুর হয়েছে। এ বার মেয়াদ বৃদ্ধিও নিশ্চয়ই হয়ে যাবে।’’
তাঁদের বিয়ে নিয়ে উৎসাহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও। ওই রাস্তায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখলে শামীরের প্রতিবেশীরাই তাঁর বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় এক গাল হেসে শামীর ও জাওয়ারিয়ার প্রশ্ন, ‘‘আমরা কী এমন করেছি যে, আমাদের নিয়ে এত প্রচার হচ্ছে? আমরা তো একে অন্যকে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছি।’’ পাঁচ বছরের সম্পর্কে মাত্র দু’বার দু’টি দেশে দু’জনের দেখা হয়েছে। এক বার তাইল্যান্ডে এবং এক বার দুবাইয়ে। কোভিডের কারণে দু’দেশের তরফে ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া সত্ত্বেও শামীর ও জাওয়ারিয়া বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি।
পাকিস্তানে শাড়ির ততটা চল নেই। কিন্তু ভারতীয় তথা কলকাতার ছেলে শামীরের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পর থেকে জাওয়ারিয়া এ দেশের সংস্কৃতিকে আন্তরিক ভাবে আপন করতে চাইছেন। বলিউডের সিনেমা নিয়েও উৎসাহ রয়েছে তাঁর। জাওয়ারিয়ার কথায়, ‘‘এ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়। আমার এই দেশটা ভাল করে দেখার খুব ইচ্ছে। আমি কলকাতার দুর্গাপুজোর কথা খুব শুনেছি। এখানেও সুন্দর সুন্দর শাড়ি পাওয়া যায়। আমার খুব ইচ্ছে, বিয়ের পরে শাড়ি পরে দুর্গাপুজো দেখতে যাব।’’ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শামীর ও জাওয়ারিয়ার বিয়ে নিয়ে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বাড়িতে ।
ভারতে আপনার শ্বশুরবাড়ি। বাপের বাড়ি পাকিস্তান। দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট খেলা হলে কার পক্ষ নেবেন? পিছনে দাঁড়ানো হবু শাশুড়ি নুসরত খান খোঁচা দিলেন হবু পুত্রবধূকে। জাওয়ারিয়ার হয়ে তিনিই বলে ওঠেন, ‘‘অবশ্যই শ্বশুরবাড়ির পক্ষ নেবে। এ দেশকে ও আপন করে নেবে। আমার পূর্বপুরুষেরাও তো পাকিস্তানের বাসিন্দা। আমার জন্ম ভারতে। এখন তো পুরোদস্তুর কলকাতার বাসিন্দা আমি। ভুলক্রমে ক্রিকেট দেখার সময়ে পাকিস্তানের কারও খেলা ভাল লাগার কথা জানালেই স্বামী বকুনি দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy