শহরে পোষ্যকুকুরের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন।
শহরে পোষ্যকুকুরের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। নিয়ম অনুযায়ী, বাড়িতে কুকুর পুষলে কলকাতা পুরসভার থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তব হল, কলকাতা পুর এলাকায় বর্তমানে পোষ্য কুকুরের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ হাজার হলেও পুরসভার খাতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত পোষ্যের সংখ্যা মাত্র ৮০টি। ফলে পোষ্যের লাইসেন্স ফি বাবদ বছরে ১৫০ টাকার রাজস্ব থেকে তো পুরসভা বঞ্চিত হচ্ছেই, সেই সঙ্গে লাইসেন্স না থাকায় পোষ্যের মালিক থেকে শুরু করে শহরবাসীরাও নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
পোষ্যের লাইসেন্স না থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে? প্রথমত, ভ্রমণের জন্য পোষ্যকে কোনও ক্রেশে রেখে ফিরে এসে যদি তাকে সেখানে খুঁজে না পান, তা হলে লাইসেন্স না থাকার জন্য থানায় সেই সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রাহ্য হবে না। মাস চারেক আগে গল্ফ গ্রিনে এ রকমই একটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পোষ্য বা ক্রেশ— কারওরই লাইসেন্স ছিল না।
দ্বিতীয়ত, লাইসেন্স না করিয়ে বসতবাড়িতেই অবাধে পোষ্যের প্রজনন করানোর অভিযোগ আসছে পুরসভায়। আলাদা খামার করে সেখানে পোষ্যদের প্রজননের নিয়ম থাকলেও অভিযোগ, বিনা লাইসেন্সেই শহরে রমরমিয়ে চলছে এই ব্যবসা। বছর কয়েক আগে মৌলালির কাছে ক্রিক রো-এর একটি শরিকি বাড়িতে এ ভাবে পোষ্যের প্রজনন করানো হচ্ছিল। সে সময়ে সেই পোষ্য এক জনকে কামড়ানোয় পরিবারের তরফে পুর স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুরসভার ডগ পাউন্ডের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, বাড়িতে পোষ্যের প্রজনন করানো হলেও কোনও লাইসেন্স নেই। কিন্তু সমস্যা হল, লাইসেন্স না থাকা ওই সমস্ত পোষ্যকে বাজেয়াপ্ত করে তাদের আলাদা করে কোথাও রাখার মতো পরিকাঠামোও পুরসভার নেই।
পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পোষ্যকে অ্যান্টি র্যাবিস ইঞ্জেকশন দেওয়া আছে কি না, সেটাই হল তার লাইসেন্স করানোর প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু বেশির ভাগ পোষ্যের লাইসেন্স করানো না থাকায় অনেক অভিভাবকই তাকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারেও উদাসীন থাকেন। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘বহু ক্ষেত্রে কুকুর মানুষকে কামড়ানোর পরে মালিকের টনক নড়ে। কিন্তু লাইসেন্স করানো থাকলে প্রতিষেধকটাও আগে দেওয়া যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ পোষ্যের লাইসেন্স না থাকায় এই সংক্রান্ত কোনও তথ্যভান্ডারও পুরসভার কাছে নেই।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য নানা কারণে শহরে প্রায়ই পোষ্যকে গৃহহীন করে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতেই থাকে। লাইসেন্স করানো থাকলে পুরসভার ডগ পাউন্ড সেকশনের নিজস্ব নেটওয়ার্কের সাহায্যে তাদের অভিভাবকদের খুঁজে বার করতে বেগ পেতে হয় না। এ ক্ষেত্রে পোষ্যের লাইসেন্স থাকলে পুরসভা সংশ্লিষ্ট মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে।
পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে পোষ্য সংক্রান্ত নানা অভিযোগ এলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাইসেন্স নেই বলেই দেখা যায়। এক পুর আধিকারিকের কথায়,
‘‘লাইসেন্স নেই কেন, প্রশ্ন করতে গেলে পোষ্যের মালিক জানান, লাইসেন্স করাতে হয় সেটাই জানতাম না! ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে গিয়েও পিছিয়ে আসে পুরসভা।’’
পোষ্যের লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা দেখার কাজ পুর লাইসেন্স বিভাগের হলেও অবৈধ ভাবে প্রজনন ঠেকানো ছাড়াও পশু নিরোধক আইন ১৯৬০-এর পরিপন্থী কোনও কাজ বন্ধ করার দায়িত্ব রয়েছে রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কাঁধে। কিন্তু অভিযোগ, ওই দফতরটিও এ বিষয়ে উদাসীন। এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘এই বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নেব।’’ আর কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘কুকুরের লাইসেন্স ফি নেওয়ার মতো আমাদের পরিকাঠামোই নেই। মানুষের ব্যবসা সংক্রান্ত করের টাকা আদায় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy