ছবি: সংগৃহীত।
রহস্য আরও বাড়ল আলিপুরের ব্যবসায়ী-কন্যা রশিকা জৈনের মৃত্যুর ঘটনায়। এফআইআর দায়ের হওয়ার প্রায় দেড় বছরের মাথায় বুধবার রাতে রশিকার স্বামী তথা মূল অভিযুক্ত কুশল আগরওয়ালকে গ্রেফতার করার পরে বৃহস্পতিবার মুখ খুললেন তাঁর বাড়ির লোকজন। কুশলের পরিবারের দাবি, রশিকার বাবা-মা বিভিন্ন কারণে মেয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেন। রশিকা অবসাদে ভুগছিলেন ও বিয়ের আগে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন বলে তাঁদের দাবি। রশিকার বাবা মহেন্দ্রকুমার জৈন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘এই মৃত্যুর দায় কার, আদালতে প্রমাণ হবে। দায় রয়েছে বলেই কুশল গ্রেফতার হয়েছে।’’
পুলিশি হেফাজতে নেওয়া কুশলকে বৃহস্পতিবার দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর। রশিকার বাবা ও কুশলের পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন কুশল।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডি এল খান রোডে শ্বশুরবাড়ির চত্বর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বছর পঁচিশের রশিকাকে। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। পরদিন রশিকার স্বামী কুশল ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও আইনি লড়াই গড়ায় নিম্ন আদালত, কলকাতা হাই কোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে। গত মঙ্গলবার পরিষ্কার হয়ে যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রক্ষাকবচ মিলছে না। বুধবার রাতে কুশলকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।
গ্রেফতারিতে কেন প্রায় দেড় বছর লাগল, সেই প্রশ্নও ওঠে। রশিকার বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, টাকা আনার জন্য মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হত। নেশাগ্রস্ত স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই রশিকার এই পরিণতি বলে দাবি তাঁদের। কুশলের অন্য সম্পর্কের কথাও জেনে ফেলেছিলেন রশিকা। প্রভাব খাটিয়ে কুশলের পরিবার গ্রেফতারি এড়িয়েছে বলেওতাঁদের দাবি।
২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের উমেদ ভবনে বিলাসবহুল বিয়ে হয়েছিল দু’জনের। কুশলের পরিবার এ দিন জানিয়েছে, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে দু’জনে রাজস্থানে ঘুরতে যান। ৯-১১ ফেব্রুয়ারি কুশলই ঘোরার পরিকল্পনা করেন। কলকাতায় ফেরার পরদিন, ১২ ফেব্রুয়ারি কুশলদের বাড়িতেই রশিকার বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করেন কুশলই। তার পরের দিন শহরের একটি শপিং মলের হোটেলে রশিকার বাড়ির এক আত্মীয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেটিরও পরিকল্পনা কুশলের করা বলে তাঁর পরিবারের দাবি। কুশলের খুড়তুতো ভাই রোহিত আগরওয়ালের দাবি, ‘‘এর পরদিনই ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সে দিনও কুশল নিজের বাবা-মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে একটি নামী হোটেলে রাতের খাবার খেতে যান। রশিকার শ্বশুরের তরফে পরদিন তাঁকে হিরের গয়না কিনে দেওয়ার কথা ছিল। রশিকাকে নিয়ে সেটি কিনতে গিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর নরেশ আগরওয়াল।’’ কুশলের পরিবারের দাবি, কলকাতার গয়না পছন্দ না-হওয়ায় নিজের মুম্বই নিবাসী মেয়েকে দিয়ে গয়নাটি কিনিয়ে আনার কথা দিয়েছিলেন নরেশ। এর পরদিনই মৃত্যু হয় রশিকার।
রোহিতের প্রশ্ন, ‘‘যে স্ত্রীর জন্য এত কিছু করেছে, তিনি কী করে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারেন?’’ কুশলের পরিবারের দাবি, তাঁদের ফাঁসানোর জন্য মামলা করেছেন রশিকার বাবা মহেন্দ্রকুমার। এমনকি, মেয়ের মৃত্যুর পর ব্যাঙ্কের লকার থেকে রশিকার শ্বশুরবাড়ির অজানতেই তাঁর কোটি টাকার গয়না তিনি বার করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করে এ দিন মহেন্দ্রকুমার বলেন, ‘‘আমার বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কুশলদের বাড়িতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মেয়ের ঘোরার খরচ, হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের খরচের সবটাই আমিই দিয়েছিলাম। তা ছাড়া ব্যাঙ্কের যে লকারের কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমার নামেই রয়েছে। ফলে বেআইনি কাজের ব্যাপারই নেই। আইনি লড়াইয়ে ফাঁদে পড়েই এখন এ সব বলার চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy