ধৃতকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। — প্রতীকী চিত্র।
‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে সারা দেশে প্রতারণা চালানো একটি দুষ্কৃতী দলের প্রধান চক্রীকে অবশেষে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে বেঙ্গালুরু থেকে তাকে ধরা হয়। ধৃতের নাম চিরাগ কপূর ওরফে চিন্তক রাজ। সারা দেশে ৯৩০টি প্রতারণার মামলার সঙ্গে তার যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতারণার মোট অঙ্কের পরিমাণ প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ধৃতকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের জুন মাসে দেবেশী দত্ত নামে এক মহিলা কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগে অভিযোগ দায়ের করে জানান, ফোনে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৪৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্তেরা। তদন্তে নেমে একাধিক অ্যাকাউন্টে প্রতারণার সেই টাকা সরিয়ে ফেলার কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। সেই সমস্ত অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই গত সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্রপুর, গড়িয়া এবং পাটুলি এলাকায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। ধৃতদের কাছ থেকে ১০৪টি পাসবই, ৬১টি মোবাইল, ৩৩টি ডেবিট কার্ড, ১৪০টি সিম কার্ড বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই চিরাগ ও তার সহযোগীদের নাম পান তদন্তকারীরা। পরে দিল্লি থেকে চিরাগের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ। যদিও তখন চিরাগের সন্ধান মেলেনি। এ দিন ভোরে বেঙ্গালুরুর জে পি নগর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা দেশে ৯৩০টি সাইবার প্রতারণার মামলার সঙ্গে ধৃতের যোগ রয়েছে। প্রতারণার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট (মিউল অ্যাকাউন্ট) খুলে সেখানেই এই বিপুল পরিমাণ টাকা সরানো হয়েছিল বলে লালবাজার জানতে পেরেছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চিরাগই দেশ জুড়ে চলা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ চক্রের মাথা। আড়ালে বসে এজেন্ট মারফত গোটা চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করত সে। সারা দেশেই এই চক্রের সদস্যেরা সক্রিয় বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিরাগ দলের মাথা হলেও নিজে কখনও কারও সঙ্গে কথা বলত না। বিশ্বস্ত কয়েক জন তার হয়ে যোগাযোগ রাখত। চিরাগ নিজে যাতে কখনও পুলিশের নজরে না পড়ে, তার জন্যই এই পরিকল্পনা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তার সঙ্গে বিদেশি দুষ্কৃতীদের যোগাযোগ থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
ধৃত চিরাগের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, চারটি মোবাইল, দু’টি হার্ড ডিস্ক, তিনটি রাউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে। এ ছাড়া, একাধিক সিম কার্ড, চেকবই, বিভিন্ন সংস্থার রাবার স্ট্যাম্পও উদ্ধার করা হয়েছে। লালবাজারের গোয়েন্দারা মনে করছেন, ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানোই শুধু নয়, ভুয়ো
নথি দেখিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খুলত চিরাগ।
গত কয়েক মাসে সারা দেশে লাফিয়ে বেড়েছে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ সংক্রান্ত সাইবার প্রতারণার ঘটনা। কলকাতাতেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছেন একাধিক বার। পুলিশের তরফেও বার বার সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দেখা গিয়েছে। তাই চিরাগের গ্রেফতারি নিজেদের অন্যতম সাফল্য বলে মনে করছে কলকাতা পুলিশ। ধৃতকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ, শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হতে পারে।
পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট চক্রটি সক্রিয় হয়েছিল। সারা দেশেই তাদের জাল ছড়ানো। চিরাগ ছাড়াও চক্রের আরও মাথা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy