Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Ayesha Noor

হার মেনেছে মৃগী রোগ, নিখরচায় ক্যারাটে-পাঠে মেয়েদের সুরক্ষার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আয়েষা

দাদা ক্যারাটে শিখত। পাঁচ বছরের ছোট্ট আয়েষা গুটি গুটি ঢুকে পড়ত সেই ক্লাসে। কোচ এম এ আলির জহুরির চোখ হিরে চিনে নিতে ভুল করেনি।

মেয়েদের আত্মরক্ষায় ক্যারাটের পাঠ নিখরচায় দেন আয়েষা।— নিজস্ব চিত্র।

মেয়েদের আত্মরক্ষায় ক্যারাটের পাঠ নিখরচায় দেন আয়েষা।— নিজস্ব চিত্র।

পরমা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ১৯:২৪
Share: Save:

বছর কুড়ি বয়স। তুলনায় ছোটখাটো, খানিকটা রুগ্ণ চেহারাই বলা চলে। মৃগী রোগ শরীরে থাবা বসায় যখন-তখন। অভাবের সংসার চলে টেনেটুনে।

ক্যারাটে ব্ল্যাক বেল্ট। চার-চারটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে আসা। মেয়েদের আত্মরক্ষায় ক্যারাটের পাঠ দেন নিখরচায়। বছরে এক লক্ষ মেয়েকে এ ভাবে নিরাপত্তার দিকে এগিয়ে দেওয়াটাই তাঁর লক্ষ্য। অজস্র সম্মান এসেছে। এমনকি, তাঁকে নিয়ে হয়ে গিয়েছে আস্ত একটা ছবিও।

দুটো ছবি মেলাতে পারছেন কি? না পারাটাই স্বাভাবিক। তবু এটাই বাস্তব করে ফেলেছেন কলকাতার ক্যারাটে-কন্যে আয়েষা নুর। মফিজুল ইসলাম লেনের ছোট্ট ঘরে দারিদ্রে মোড়া জীবন থেকে উঠে আসা এই মেয়ের হাত ধরেই এখন নিজেকে নিরাপদ রাখার স্বপ্ন দেখতে শিখছেন এ শহরের অজস্র মেয়ে ও মহিলারা।

আরও পড়ুন: অথ ব্যানার কথা: নেপথ্যে শোভনের ঘনিষ্ঠরা, নাকি অন্য কোনও রহস্য?

দাদা ক্যারাটে শিখত। পাঁচ বছরের ছোট্ট আয়েষা গুটি গুটি ঢুকে পড়ত সেই ক্লাসে। কোচ এম এ আলির জহুরির চোখ হিরে চিনে নিতে ভুল করেনি। অতএব, সেই শুরু এবং দ্রুত উন্নতি করে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্তি অচিরেই। স্কুল, পাড়া, অন্য পাড়া, কলকাতা, দেশের অন্য শহর পেরিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও সাফল্য পাওয়া অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল ছোট্ট আয়েষার। ২০১০, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৯-আন্তর্জাতিক ময়দানে পা রেখে চার চারটে সোনাও ঘরে নিয়ে এসেছে মেয়ে। মৃগী রোগে ভুগে বার বার আক্রান্ত হওয়া হার মেনেছে তুমুল জেদের কাছে।

বছর সাতেক আগে বাবাকে হারানোর পরে আরও অনেকটা অভাব ঢুকে পড়েছিল সংসারে। মা সেলাই করে কোনওমতে ভাত জোটান। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া দূরে থাক, বাড়িতে হাঁড়িও চড়ে না এক এক দিন। এ সবের মধ্যেই ২০১৩ সালে গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ড। বাকি সবার মতোই শিউরে উঠল বছর তেরোর আয়েষাও।

তার পরেই এক সকালে কোচের কাছে হাজির ক্যারাটে-কন্যে। নিজের সুরক্ষায় মেয়েদের সচেতন ও স্বনির্ভর করে তুলতে এ বার সে ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দিতে চায়। এবং এই পাঠ সে দেবে একেবারে নিখরচায়। আয়েষার জেদের কাছে হার মানলেন কোচ এম এ আলিও। পাড়াতেই এক ছোট্ট জায়গায় জনা তিরিশেক মেয়েকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল ক্লাস। এবং সাড়াও মিলল যথেষ্টই। এতটাই যে, মৌলালির রামলীলা ময়দানে নিজের ক্লাস ছাত্রীর হাতেই ছেড়ে দিলেন কোচ স্যর। এবং ক্রমশ এখন কোচ থেকে ম্যানেজার সবটাই হয়ে উঠে আগলে রাখেন আয়েষাকে।

আরও পড়ুন: মোরাটোরিয়ামের ২৪ ঘণ্টা আগেই ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ২৬৫ কোটি টাকা তুলেছিল গুজরাতের সংস্থা

জনা তিরিশেককে নিয়ে শুরু করে গত সাত বছর ধরে হু হু করে, হাজারে হাজারে বাড়ছে আয়েষার ছাত্রী-সংখ্যা। সব বয়সীরাই ভিড় করছেন ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নিতে। গত বছর আয়েষার ক্লাস থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বস্তির বাসিন্দা ছ’টি মেয়ে। এ বছর সেই সংখ্যাটা বেড়ে ২৪ জনের একটি দল যাচ্ছে তাইল্যান্ডে।

মেয়েদের পায়ের তলায় মাটি জুগিয়ে, আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়ার এমন উদ্যোগের জন্য আয়েষাকে সম্মান জানিয়েছে মার্কিন সরকার। কলকাতার ক্যারাটে-কন্যের ঝুলিতে এসেছে ‘দ্য হিরো অব জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ সম্মান। এ ছাড়াও, কলকাতায় তো বটেই, দেশের নানা জায়গা থেকে এসেছে নানা শিরোপা। এমনকি, আয়েষাকে নিয়ে হয়ে গিয়েছে আস্ত একটি আন্তর্জাতিক ছবি, ‘গার্ল কানেক্টেড’। উড়াল দিচ্ছেন কুড়ির আয়েষা। অনেক অনেক উঁচুতে। তাঁর ডানাতেই ভর করে নিরাপদে দিনযাপনের স্বপ্ন দেখতে শিখছেন নানা বয়সের আরও অজস্র নারী। আর ছোট্ট শরীরে বাসা বেঁধে থাকা রোগের জেরে কিছুটা দুর্বোধ্য উচ্চারণে আয়েষা নিজে কী বলছেন?

“আমি চাই এমন একটা দিন আসুক, যে দিন আর কোনও মেয়েকে অসহায় ভাবে বিপদে পড়তে হবে না। নিজের আত্মরক্ষা মেয়েরা নিজেরাই করে নিতে পারবে ক্যারাটের প্যাঁচে। তাই বছরে অন্তত এক লক্ষ মেয়েকে এ ভাবেই নিখরচায় প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে চাই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Epilepsy Karate Ayesha Noor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy