Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক নয়, ছোটদের স্কুল নিয়ে সতর্ক হতে পরামর্শ

রাজ্য জুড়ে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে যাওয়ায় আবার ফিরে এসেছে কচিকাঁচাদের দুষ্টুমির চে‌না ছবি।

সন্তান কতটা সুরক্ষিত থাকবে, আপাতত এই চিন্তাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে অভিভাবকদের একটি বড় অংশকে।

সন্তান কতটা সুরক্ষিত থাকবে, আপাতত এই চিন্তাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে অভিভাবকদের একটি বড় অংশকে। ছবি— সুমন বল্লভ

শান্তনু ঘোষ

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৬
Share
Save

শুধু ঘণ্টা বাজার অপেক্ষা। কোনও মতে একটু খাবার মুখে দিয়েই টিফিন বাক্স ফেলে রেখে এক ছুটে মাঠে কিংবা কংক্রিটের চাতালে। রাজ্য জুড়ে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে যাওয়ায় আবার ফিরে এসেছে কচিকাঁচাদের দুষ্টুমির এই চে‌না ছবি। কিন্তু সন্তান কতটা সুরক্ষিত থাকবে, আপাতত এই চিন্তাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে অভিভাবকদের একটি বড় অংশকে।

তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, “ছোটদের যে হেতু এখনও প্রতিষেধক হয়নি, সে হেতু সকলের মাঝে গেলে কি কোনও বিপদ হতে পারে?” যদিও চিকিৎসক মহলের অভিমত, একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য স্কুলে গিয়ে আরও পাঁচ জন সমবয়সির সঙ্গে দৌড়োদৌড়ি, হুটোপাটি, খেলাধুলো এবং একসঙ্গে পড়াশোনা করাটা খুব জরুরি। আবার অন্য শিশুদের সংস্পর্শে এসে কোনও খুদে পড়ুয়া যদি সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বরে সংক্রমিত হয়, তা হলে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। শিশু-রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, “বাচ্চাদের প্রতিষেধক আসতে এখনও দেরি আছে। তা বলে ওদের পড়াশোনা বন্ধ রাখাটা ঠিক নয়। আমরা জানি, ছোটদের কোভিড হলে ততটা সঙ্কটজনক অবস্থা হয় না। করোনায় ওদের সঙ্কটজনক হওয়ার হার খুবই কম। বরং অন্যান্য রোগ, এমনকি, শীতকালের সাধারণ সংক্রমণ ব্রঙ্কিয়োলাইটিসেও অনেক বেশি সংখ্যক শিশুর সঙ্কটজনক অবস্থা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “কোভিডের ভয় দেখিয়ে আর বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ রাখা যাবে না। যদি দেখা যায়, আবার কখনও কোনও ঢেউ আসছে, তখন কী করণীয় ভাবা যাবে। কিন্তু কবে সেটা আসবে, তার জন্য তো অপেক্ষা করে থাকা যায় না।”

প্রতিষেধক না-পাওয়া নিয়ে বাবা-মায়েদের সংশয় বা আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলেই মত করোনার প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিভাগের অধিকর্তা, চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের। তাঁর কথায়, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট বলে দিয়েছে, কোভিডের প্রতিষেধকের সঙ্গে স্কুল খোলার কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে সে ভাবে প্রতিষেধক দেওয়া হয়নি, কিন্তু স্কুল চলছে। বহু শিশু তো হাম ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জায় কোনও কোনও শিশু মারাও যায়। কিন্তু সকলে কি হাম ও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক নেয়?” এ দেশে অবশ্য ইতিমধ্যেই দু’বছরের বেশি বয়সিদের উপরে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে। শুভ্রজ্যোতি বলেন, “কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতাও বেশ ভাল বলেই জানা গিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে আবেদন, জরুরি ভিত্তিতে সেটি প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হোক। তা হলে স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা সহজেই প্রতিষেধক পেতে পারে।” ছোটদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য স্কুল খোলা যে জরুরি, তা মেনে নিয়েও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা যে হেতু নিশ্চিহ্ন হয়নি, তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলতেই হবে।

শিশু-রোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মাস্কের প্রয়োজন নেই। পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সিদের মধ্যে যারা স্বচ্ছন্দে মাস্ক পরতে পারবে, তারাই পরবে। তবে খেলাধুলো বা অন্য কায়িক পরিশ্রমের সময়ে তা খুলে রাখতে হবে। তাঁর কথায়, “সাধারণ পদ্ধতিতে হাত ধোয়ার বিষয়টি বাচ্চাকে শেখাতে হবে। যে স্কুলবাস বা গাড়িতে সে যাচ্ছে, সেটি যেন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। জ্বর-সর্দির মতো কোনও উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো উচিত হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।” মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও একটি শিশুর স্কুলে যাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি বলে মত ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র অধিকর্তা, চিকিৎসক অমিত ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে
মেলামেশার ফলে শিশুর একাকিত্ব যেমন কাটবে, তেমনই একটি বন্ধন তৈরি হবে। আবার বাড়িতে বাবা-মায়ের শাসনের বাইরে গিয়ে স্কুলে সকলের মাঝে স্বাধীন একটা জগৎ পাবে সে। এ সবের ফলে একটি শিশু যদি মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকে, তা হলে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতেও সুবিধা হবে।”

School Reopening

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}