এসএসকেএমে শুভ্রা ঘোষ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
চতুর্থীতে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন তিনি। সুরুচি সঙ্ঘের পুজো থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষবরণের উৎসবে যোগ দেওয়া দূর, হাসপাতাল থেকে এখনও বাড়িই ফেরা হল না হাওড়ার বালিটিকুরির বাসিন্দা বছর চব্বিশের শুভ্রা ঘোষের। তিন দফায় অস্ত্রোপচারের পরেও তিনি এসএসকেএম হাসপাতালেই ভর্তি।
আর তাঁর বাবা, বস্ত্র কারখানার কর্মী গোপালবাবু হিমশিম খাচ্ছেন মেয়ের আয়ার খরচ জোগাতেই। বুধবার বর্ষবরণের দুপুরে মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে এসে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নতুন বছর বলে কিছু নেই। রোজ বিকেলে মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে আসি। বাড়ি ফিরতেই তো রাত আটটা পেরিয়ে যায়। এ জন্য কাজে কামাই হচ্ছে। এ মাসের পরে কাজটা আর থাকবে কি না, জানি না। কিন্তু মেয়েটা অন্তত সুস্থ হয়ে উঠুক!’’ কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন আয়ার খরচ ৪০০ টাকা। এত দিন লোকের সাহায্যে চলছি, এ বার কী হবে?’’
২ অক্টোবর সুরুচি সঙ্ঘের পুজো উদ্বোধন করে নিজের গাড়িতে উঠেও সেখানে কারও পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। ভিড়ে চোট পাওয়া শুভ্রাকে উদ্ধার করে সঙ্গী মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন তিনি। শুভ্রাকে দ্রুত হুমায়ুন কবীর সরণির একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শুভ্রার পরিবারের অভিযোগ, সেখান থেকে কয়েকটি এক্স-রে এবং একটি ইঞ্জেকশন দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই শুভ্রার পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন, তিনি কেমন আছেন দেখতে তরুণীর বাড়ি পৌঁছে যান হাওড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিভাস হাজরা। তিনিই শুভ্রাকে গত ১৩ অক্টোবর এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ দিন ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া ওয়ার্ডের ১১ নম্বর শয্যায় শুয়ে শুভ্রা। কোনও মতে বসলেও শরীরের নীচের অংশ নাড়ানোর ক্ষমতা নেই তাঁর। বাঁ পা এতই ফোলা যে তার নীচে রাখা পাশবালিশও ছোট দেখাচ্ছে। কোনও মতে গামছা দিয়ে পায়ের ওই অংশ ঢাকা। পাশে বসা শুভ্রার মা সন্ধ্যাদেবী জানান, এক সময়ে পচন ধরা পায়ের সংক্রমণ কোমরে পৌঁছে গিয়েছিল। শুভ্রার মোট তিন বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর শেষ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনও মেয়ে হাঁটতে পারছেন না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে অস্ত্রোপচারের দিন পেতে সময় লেগেছিল। এখন যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। দিন কয়েকের মধ্যেই বোঝা যাবে তাঁর বাঁ পা রাখা যাবে কি না। অস্ত্রোপচার হওয়া অংশের ফের অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভিক্টোরিয়া ওয়ার্ড-সহ প্রায় গোটা এসএসকেএম হাসপাতালের ভিতরে ঝুলছে কাগজের চাঁদ-তারা, বেলুন। সে দিকে তাকিয়ে জল ভরা চোখে শুভ্রা বলে উঠলেন, ‘‘বাবার একার রোজগারে সংসার চলে না। সল্টলেকের একটি কল সেন্টারে কাজ নিয়েছিলাম। তারা জানিয়ে দিয়েছে, আর আসার দরকার নেই। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে যে এমন হবে একবারও ভাবিনি।’’
চাকরি গেলেও বন্ধুরা অবশ্য সঙ্গ ছাড়েননি শুভ্রার। যাঁদের সঙ্গে বেরিয়ে আহত হয়েছিলেন, তাঁরা ২৫ ডিসেম্বর কেক নিয়ে বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। গামছা টেনে চোখ মুছতে থাকা শুভ্রা বলে ওঠেন, ‘‘ওরা বলছিল, পার্ক স্ট্রিট তো কাছেই। হাঁটবি চল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy