বাড়িতে পুজোয় ব্যস্ত দেবদত্তা (বাঁ দিকে) ও দেবারতি। নিজস্ব চিত্র।
বংশপরম্পরায় পরিবারের সকলে পুরোহিত। ফলে পুজোর পরিবেশেই বড় হয়েছে দুই বোন। বছরখানেক আগে বাবার কাছে পুজো শেখার আবদার করে বড় মেয়ে। বায়না জুড়ে দেয় বোনও। শুরু হয় পৌরোহিত্যের শিক্ষা। সেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দিদিই এ বার নিজের স্কুলের সরস্বতী পুজোর পুরোহিত। তাকে সহযোগিতা করবে দশম শ্রেণির পড়ুয়া বোন।
আজ, বৃহস্পতিবার শুক্লা পঞ্চমীর তিথিতে দুই বোনের উচ্চারিত মন্ত্রেই পুষ্পাঞ্জলি দেবে বালির বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। যোগ দেবেন শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরাও। শিক্ষিকাদের কথায়, ‘‘বিদ্যার দেবীকে পুজো করবে এক বিদ্যার্থী। এর থেকে বড় কী হতে পারে?’’ উচ্ছ্বসিত অন্য পড়ুয়ারাও। ছোটরা বলছে, ‘‘এ বার আমাদের দুই দিদি পুরোহিত।’’ দুই বোনের সতীর্থদের অনেকে বলছে, ‘‘আমরাও তো আগামী দিনে এমন করতে পারি।’’
বালির নর্থ ঘোষপাড়ার বাসিন্দা, শঙ্কর চক্রবর্তীর দুই মেয়ে দেবদত্তা ও দেবারতি। এ বছর মাধ্যমিক দেবে দেবদত্তা, আর দশম শ্রেণিতে উঠেছে দেবারতি। পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই দুই বোন শাড়ি পরে, উত্তরীয় ঝুলিয়ে বাবার সঙ্গে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কিংবা শিব বা নারায়ণ পুজোয় যায়। তা নিয়ে কোথাও আপত্তি ওঠেনি। বরং বাবার যজমানদের বাড়িতে গিয়ে প্রশংসাই মিলেছে বলে জানাচ্ছে দেবদত্তা। সে বলছে, ‘‘শ্রাদ্ধে গিয়ে গীতা পাঠ করেছি।’’ ২০২২ থেকে এমন চললেও, তা ছিল অনেকেরই অজানা। দিনকয়েক আগে দুই বোনের হোয়াটসঅ্যাপের ছবি দেখেন স্কুলের শিক্ষিকারা। জানতে পারেন, তাঁদের দুই ছাত্রী পুজো-অর্চনায় রীতিমতো পারদর্শী হয়ে উঠেছে।
বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সোনালি দত্ত জানাচ্ছেন, এর পরেই টিচার ইন-চার্জ নবালী ভট্টাচার্যের সম্মতিতে শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নেন, ওই দুই ছাত্রীই হবে এ বারের পুজোর পুরোহিত। ডাকা হয় দেবদত্তা ও দেবারতির মা কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে। তাঁর কথায়, ‘‘দিদিদের বলি, আমিও চাই ওরা পুরোহিত হোক। স্কুলের পুজো করুক। পুরোহিত শুধু পুরুষেরা হচ্ছেন। এটা ঠিক নয়।’’ কৃষ্ণার অনুমতি মিলতেই, স্কুল কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। সোনালির কথায়, ‘‘বালি বনেদি জনপদ। সেখানে এই ঘটনা অন্যদের কাছেও দৃষ্টান্ত হতে পারে।’’
সপ্তম, অষ্টম শ্রেণিতে সংস্কৃত পড়েছে দুই বোনই। তাই মন্ত্রোচ্চারণে সমস্যা হয় না বলেই জানাচ্ছে তারা। পুজোয় বসার সময়ে কী ভাবে, কী বলে আচমন, আসনশুদ্ধি, পুষ্পশুদ্ধি করতে হয়, তা-ও বাবার থেকে শিখে নিয়েছে। সব মন্ত্র কণ্ঠস্থ না হলেও, বই দেখে সামলে নেয় তারা। সামনেই মাধ্যমিক। তাই এখন পুজোয় কম বেরোচ্ছে দেবদত্তা। বুধবার স্কুলে এসে পুজোর গোছগাছ দেখে নেয় দু’জনেই। স্কুলের সরস্বতী পুজোর সম্পাদক, শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষার্থী জীবনের শুরু। প্রায় ৯৭ বছরের পুরনো স্কুল থেকে এ বার না হয় আধুনিক ঐতিহ্যেরও শুরু হল।’’ দুই মেয়ের পৌরোহিত্য নিয়ে শঙ্কর বলছেন, ‘‘আধুনিক সমাজে পুরোহিতের পেশায় ছেলে ও মেয়ের ভেদাভেদ থাকার অর্থ হল কুসংস্কার। ওদের বিয়ের পৌরোহিত্যও শেখাব।’’
লিঙ্গ-বৈষম্যের বেড়াজাল ভেঙে এখন পুরোহিত হচ্ছেন মহিলারা। স্কুলের সরস্বতী পুজোয় সম্ভবত এই প্রথম পৌরোহিত্য করবে দুই ছাত্রী। আজ দেবদত্তার গলায় শোনা যাবে, ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তা হারে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy