শহরের এক হাসপাতালে চলছে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা। ছবি: পিটিআই।
রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমশ আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতি দিনই এক বা একাধিক মৃত্যু হচ্ছে। তার মধ্যেই দোসর ম্যালেরিয়া। ফলে চিন্তা আরও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিধাননগরের বাসিন্দা এক পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলার ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। এ দিনই জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার বাসিন্দা এক বৃদ্ধও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।
কিন্তু দুই পুরসভারই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই মৃত্যুর নেপথ্যে ‘কোমর্বিডিটি’র (আনুষঙ্গিক অসুস্থতা) তত্ত্ব খাড়া করেছেন। যা দেখেশুনে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, “কোভিডের সময়েও এমন কোমর্বিডিটির কথা বলে মৃত্যু গোপনের চেষ্টা চলেছিল। মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা খুবই স্বাভাবিক, যে কোনও সংক্রমণেই পুরনো রোগ মাথা চাড়া দেয়। তার জন্য সংক্রমণকে অস্বীকার করা যায় না।”
রাজ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মোট আক্রান্ত এবং মৃত্যু কত, সে বিষয়ে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে দিতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর। যদিও বেসরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। মৃত ৪৫ জন। আর, ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যা চার।
এ দিন সকালে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে প্রতিমা মণ্ডলের (৫২)। সংযুক্ত এলাকা দত্তাবাদের গা-ঘেঁষা এলাকা সিসি ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন প্রতিমা। গত রবিবার তাঁর জ্বর হয়। সোমবার ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। প্রতিমার পরিবার জানায়, গত ২৬ তারিখ রক্তের পরীক্ষায় তাঁর প্লেটলেটের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার। যদিও বুধবার তাঁর জ্বর ছিল না বলেই জানিয়েছে তারা। প্রতিমা বাড়িতে রান্নাবান্নাও করেছিলেন। কিন্তু ওই দিন তাঁর পেটের সমস্যা দেখা দেয়। বিকেলের পরে প্রতিমা অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। রাতে তাঁকে ভর্তি করানো হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাত ৩টের পরে প্রতিমার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এ দিন সকাল ৭টায় তাঁর মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির ‘সিভিয়র শক’-এর উল্লেখ রয়েছে। প্রতিমাকে নিয়ে বিধাননগর পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল দুই। ইতিমধ্যে বিধাননগরে আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজার ছুঁইছুঁই। স্থানীয় পুর প্রতিনিধি রাজেশ চিড়িমার বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে মহিলার কোমর্বিডিটি ছিল। বুধবার জেলাশাসকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে কর্মীর অভাব হচ্ছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যাতে কর্মী বাড়ানো যায়, তা দেখতে হবে।’’
এ দিকে, কলকাতা পুরসভা এলাকায় ২২ জুলাই থেকে এখনও পর্যন্ত ন’জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে এ বার ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুতে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে। কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড, দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের বাসিন্দা গৌর হালদার (৬৮) গত মঙ্গলবার মারা যান। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বর আসে গৌরের। স্থানীয় পুর ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষায় ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। ১৭ তারিখ তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২০ তারিখ তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
স্থানীয় ৮ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন চৈতালি চট্টোপাধ্যায় জানান, ২০ তারিখ বাড়ি আসার পরেই গৌরের খিঁচুনি শুরু হয়। ফের ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই বৃদ্ধ ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর কলকাতায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে দাবি পুর স্বাস্থ্য দফতরের। যদিও ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি তথা স্থানীয় বিধায়ক দেবাশিস কুমারের দাবি, ‘‘ওই বৃদ্ধ ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁর অন্যান্য রোগ ছিল। হার্ট ফেল করে মারা গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy