রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তে গত রবিবার থেকে শয়ে-শয়ে উইপোকার হামলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অপারেশন কমপ্লেক্সের চারটি ওটি। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের শ্রেষ্ঠ চোখের হাসপাতাল ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তে গত রবিবার থেকে শয়ে-শয়ে উইপোকার হামলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অপারেশন কমপ্লেক্সের চারটি ওটি। বাতিল করতে হয়েছে সব অস্ত্রোপচার। ছানি কাটানোথেকে শুরু করে চোখের নেত্রনালির জটিল টিউমার, ক্যানসার, গ্লকোমা, ক্ষতিগ্রস্ত রেটিনা, সেপসিস, শিরা থেকে রক্তক্ষরণ, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা অন্তত ২০০ রোগীর অস্ত্রোপচার শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একাধিক বার কীটনাশক দিয়েও উইপোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। কার্যত গোটা ওটি কমপ্লেক্স উইপোকায় ছেয়ে গিয়েছে। সেখানে অস্ত্রোপচার করলে রোগীদের সংক্রমণ অবধারিত। ফলে কবে আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে অস্ত্রোপচার শুরু করা যাবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।
একেবারে প্রথম সারির সর্বোচ্চ স্তরের সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতি কার্যত নজিরবিহীন। আরআইও হল চোখেরচিকিৎসার ক্ষেত্রে উৎকর্ষ কেন্দ্র। রাজ্যে চোখের চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও নীতি নির্ধারণে এই কেন্দ্রকে সবার আগে রাখা হয়। চোখ সংক্রান্ত অসুখে ভোগা রোগীদেররেফারাল কেন্দ্রও হল আরআইও। সে দিক থেকে চিকিৎসার সর্বোত্তম পরিকাঠামো সেখানে থাকার কথা। আর সেখানেই ওটি কমপ্লেক্সের মতো অত্যন্ত জরুরি জায়গা কী ভাবে উইয়ের ঢিবির উপযুক্ত স্থানে পরিণত হতে পারে, তা বোধগম্য হচ্ছে না অনেকেরই।
প্রশ্ন উঠেছে, কয়েকশো উইপোকা রাতারাতি তো ওটিতে জন্ম নেয়নি। তা হলে যেখানে সব চেয়ে বেশি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কথা, সেখানে উইয়ের ঢিবি দেখেও এত দিন কেন চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা চুপ করে বসেছিলেন? কেন উপযুক্ত সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
আরআইও-র অধিকর্তা অসীমকুমার ঘোষের কথায়, ‘‘ওটির অবস্থা খারাপ। দেওয়াল চুঁইয়ে জল পড়ছে, ফলস সিলিং উই লেগে খসে যাচ্ছে। প্রায় তিন মাস ধরে একাধিক বার এই সমস্যার কথা পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের জানানো হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। এখন এমন পিলপিল করে উই বেরোচ্ছে যে, ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রোগীদের জন্য খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু, এখন অস্ত্রোপচার করা অসম্ভব।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আরআইও-র ওটি কমপ্লেক্সে মোট চারটি ঘরে ২২টি শয্যা রয়েছে। ওই কমপ্লেক্সের ফলস সিলিংয়ের ভিতরে উইপোকার বাসায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এত দিন তারা বেরোয়নি, ফলে সেখানেই অস্ত্রোপচার চলছিল। কিন্তু আচমকা গত রবিবার দুপুরে পিলপিল করে উইপোকা বেরিয়ে গোটা ওটি কমপ্লেক্স ভরে যায়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনও ক্রমে কীটনাশক স্প্রে করে ঘর বন্ধ করে দেন।
তাঁরা ভেবেছিলেন, উই সব মরে যাবে। কিন্তু সোমবার সকালে ঘর খুলতে দেখা যায়, বেশ কিছু উই মরেছে ঠিকই, কিন্তু ওটি কমপ্লেক্স জুড়ে আরও কয়েকশো উইপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেঝেতে কিলবিল করছে উইয়ের বাচ্চা, পড়ে রয়েছে ডিম!
এ দিকে, সোমবার ১৫০টি ছানির অস্ত্রোপচার-সহ মোট ২০০ জন রোগীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। রাজ্যের দূর-দূরান্ত থেকে তাঁরা সকাল সকাল চলে এসেছিলেন। উপায়ান্তর না দেখে সমস্ত অস্ত্রোপচারই বাতিল করতে হয়। পেস্ট কন্ট্রোলের কাজ করে ফের বন্ধ রাখা হয় ওটি কমপ্লেক্স।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, স্বাস্থ্য দফতর রাজ্য জুড়ে অসংখ্য ভবন, কমপ্লেক্স, হাসপাতাল বানাচ্ছে। অথচ, পুরনো ঐতিহ্যশালীচিকিৎসা কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। আরআইও সূত্রের খবর, পুরনো ভবন সংস্কারের জন্য ৮৩ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প এবং ভবনেরতলা বাড়িয়ে নতুন ওটি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য এক কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা গত তিন বছর ধরে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়ে রয়েছে। অথচ, সেগুলির কোনও সুরাহা হয়নি। অতীতে অনেক হাসপাতালে আরশোলা, ছারপোকার কথা শোনা গিয়েছে। বেড়াল-কুকুরের উৎপাতও অনেক জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এ ভাবে উইপোকার সমবেত আক্রমণে অস্ত্রোপচার বন্ধ হওয়ার ঘটনা এক কথায় অভূতপূর্ব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy