আত্মরক্ষা: কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে মহিলাদের মার্শাল আর্ট শেখানোর শিবির। শনিবার, ময়দানে। ছবি: সুমন বল্লভ
তিনি তখন কলেজে পড়েন। এক দিন বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল কলকাতার শামা রহমানকে। সহৃদয় এক পথচারী তাঁকে সে সময়ে বাঁচিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার পর থেকেই শামার মনে হত, তিনি সে দিন একা থাকলে কে বাঁচাত? সেই সঙ্গেই ভাবতেন, কেনই বা তাঁকে বাঁচাতে অন্য কাউকে এগিয়ে আসতে হবে? শামা তাই ঠিক করেন, নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। কিন্তু কোথায়? কী ভাবে?
শামার কলেজেই দু’দিনের একটি কর্মশালা করিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সেখানে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে হলেও কলেজ করে আর ছাত্রী পড়িয়ে সময় পেতেন না। তাই কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে মার্শাল আর্ট শিখতে পারেননি শামা। কিন্তু কলকাতার রাস্তায় বড় বড় হোর্ডিংয়ে ‘তেজস্বিনী’র কথা জানতে পেরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী নাম লেখান তাতে। তার পরেই শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় সোজা হাজির কলকাতা পুলিশের অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে!
পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচকের বাসিন্দা, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বাতী চক্রবর্তীও ছুটে এসেছেন সেই আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে। বছর দুই আগেও রাতে গ্রামের রাস্তা ধরে অন্ধকারে বাড়ি ফিরতে হত তাঁকে। সারা দিন নিজের পড়াশোনা সামলে বিকেলের পর থেকে গৃহশিক্ষকতা করতেন তিনি। রাস্তার মাঝে সন্ধ্যার পরে একদল যুবকের আড্ডা বসত। স্বাতীর কথায়, ‘‘যে বাড়িতে পড়াতে যেতাম, আমার বৃদ্ধ বাবাও সেখানে চলে যেতেন আমাকে নিয়ে আসতে। তখন মনে হত, মার্শাল আর্ট শিখি। কিন্তু সামর্থ্য ছিল না।’’
তাই কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে ‘তেজস্বিনী’র বিজ্ঞাপন দেখে এবং নিখরচায় শেখার কথা শুনেই তিনি ঠিক করেন, ওই প্রশিক্ষণ নেবেন। আর তাই কলকাতায় এসে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও ‘ট্রায়াল’-এ যাননি স্বাতী। কারণ, আত্মরক্ষার এই প্রশিক্ষণটাও তাঁর আজ খুব প্রয়োজন, চাকরির মতোই।
কলকাতার একটি হোমে কর্মরতা এক মহিলা নিজের মেয়েকে চোখের সামনে যৌন হেনস্থার শিকার হতে দেখেও কিছু করতে পারেননি। নবদ্বীপের বাসিন্দা সেই মহিলা আপাতত ওই বেসরকারি হোমেই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। শনিবার হোমের মেয়েদের নিয়ে মাঠে গিয়ে জানতে পারেন, চল্লিশ বছরের নীচে যে কেউ তাতে অংশ নিতে পারেন। সে কথা শুনেই সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজেও যোগ দেবেন প্রশিক্ষণে। মেয়েকেও শেখাতে পারলে ভাল হত, জানালেন তিনি।
শনিবার শামা, স্বাতী এবং ওই মহিলা ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ‘তেজস্বিনী’তে হাজির ছিলেন বিভিন্ন জেলার শ’দুয়েক তরুণী।
সেখানে প্রথম এক ঘণ্টা ফ্রি-হ্যান্ড, কিক, নি-কিক থেকে শুরু করে মার্শাল আর্টের প্রাথমিক ধাপগুলির বিভিন্ন কসরত শিখেছেন সকলেই। তবে টানা প্রশিক্ষণ নিলে হবে না। মাঝে দরকার বিশ্রামও। তাই মাঝে একটা সময়ের পরে পুলিশের তরফে দেওয়া হয় ছোলা ভেজানো, আখের গুড়, ঠান্ডা জল। পাঁচ মিনিটের ওই সময়টুকু বাদ দিলে অবশ্য কেউই বসার সুযোগ পাননি।
কখনও কোথাও আক্রান্ত হলে কী ভাবে বিভিন্ন কায়দায় ঘুষি বা লাথি মারতে হবে, সেটাই শিখিয়েছেন প্রশিক্ষকেরা। প্রথম বারের পরে দ্বিতীয় দফার এই প্রশিক্ষণ শিবিরে পুলিশের তরফে যোগ ব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামেরও আয়োজন করা হয়েছিল। কারণ, মন আর মার্শাল আর্টের যোগ খুব নিবিড়। দু’টো ধাপে প্রথম দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সকলেরই একটাই দাবি ছিল, আর কিছু না-হোক, ওই দু’ঘণ্টা তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে! অনেকের আবার দাবি, বাকি চার দিনের কসরতগুলি শিখলে অন্তত প্রাথমিক আত্মরক্ষাটুকু করা যাবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy