Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বিচারে বিলম্ব, তবু লড়াই জারি মেঘাদের

কলকাতায় এক মঞ্চে জড়ো হয়ে তাঁরা প্রায় এক সুরেই ডাক দিলেন, বাক্ স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে নাগরিকদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, সরকারে যে-ই থাকুক, স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নে তাদের কারও ভূমিকাই প্রশ্নাতীত নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

বাড়ির সামনে আততায়ীরা খুন করে গিয়েছে কারও প্রিয়জনকে। দাঙ্গার মামলায় বিচার চাইতে গিয়ে রাজরোষে পড়তে হয়েছে কাউকে। সরকারি বশ্যতা স্বীকার করে লেখা বদলাতে রাজি না হওয়ায় কারও কাজের জায়গা বিপন্ন হয়েছে। কলকাতায় এক মঞ্চে জড়ো হয়ে তাঁরা প্রায় এক সুরেই ডাক দিলেন, বাক্ স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে নাগরিকদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, সরকারে যে-ই থাকুক, স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নে তাদের কারও ভূমিকাই প্রশ্নাতীত নয়।

কোলাপুরে বাড়ির সামনে খুন হয়েছিলেন কমিউনিস্ট ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের নেতা গোবিন্দ পানসারে। খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ধৃত দু’জনের এক জন জেলে, অন্য জন জামিনে মুক্ত। গোবিন্দের পুত্রবধূ মেঘা পানসারে বলছিলেন, ‘‘সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে আইনি লড়াই লড়ছি। নরেন্দ্র দাভোলকর, পানসারে আর রমেশ কালবূর্গির তিনটে হত্যা মামলা একসঙ্গে করে বিচারের আর্জি জানিয়েছিলাম। যে হেতু খুনের ধরন একই রকম। এক রাজ্যে বিজেপি, অন্য রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার। দুই মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই একাধিক বার দরবার করেছি। বিচার এখনও পেলাম না। তার মধ্যেই সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ খুন হয়ে গেলেন।’’

গুজরাতের তিস্তা শীতলওয়াড় উদাহরণ দিচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে একটি ‘সাজানো মামলা’ যিনি করেছিলেন, পরে তিনি হয়েছিলেন রাজ্যের সরকারি কৌঁসুলি। এখন তাঁর নামই হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে বিবেচনায় রয়েছে! তিস্তার অভিযোগ, আদালতের ভরসায় লড়াই করব— এই ভাবনারও দিন শেষ! কারণ বিচার বিভাগে নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট বিজেপি-র সরকার। ছাত্র রাজনীতি থেকে যে প্রতিবাদী মুখ উঠে আসত, সেখানেও স্কলারশিপের নানা প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যাতে সেই পথ ধরে কানহাইয়া কুমারেরা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে না যান।

অতীতে কংগ্রেস এবং এখন বিজেপি-র আমলে আরও বেশি করে সংবাদমাধ্যমের পায়ে বেড়ি পরানোর চেষ্টা চলছে বলে সরব সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতাও। যদিও তাঁর আশা, এই সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্ফোরণের যুগে শুধু সংবাদমাধ্যমে ছড়ি ঘুরিয়ে তথ্য চেপে দেওয়া সম্ভব নয়। নাগরিকেরাই এখন ই-দুনিয়ায় সাংবাদিকের ভূমিকা নিয়ে খবর দেন।

তিন জনই মঙ্গলবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে বক্তা ছিলেন ‘বাক্ স্বাধীনতা আমার অধিকার’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে। আয়োজক সিপিএমের দৈনিক মুখপত্র। রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময়েও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিন্ত ছিল না। নন্দনে লেনিনের জীবন নিয়ে ছবি ‘টরাস’ আটকে গিয়েছিল। জেলায় বন্ধ হয়েছিল ‘পশুখামার’ নাটক। যদিও সে বার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তৎপর হয়ে নাটকে বাধাদানকারী দলীয় সাংসদকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। বাধার দৃষ্টান্ত যদিও ৩৪ বছরে ছিল ভূরি ভূরি। মেঘা, তিস্তারা এ দিন অবশ্য বামেদের ব্যর্থতার সমালোচনা করেও সঙ্ঘ রাজনীতির মোকাবিলায় বিকল্প সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বামেদের কাছেই প্রত্যাশা রেখেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Freedom of speech Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy