পরিত্যক্ত: বাড়ির ছাদে পড়ে ঘুড়ি। কিন্তু তোলার কেউ নেই। সোমবার, সেকরাপাড়া লেনে। ছবি: সুমন বল্লভ
শূন্য ছাদে ঘুড়ি কেটে পড়ে রয়েছে। কুড়িয়ে নেওয়ার কিংবা লুট করার কেউ নেই। গত বছরও কচিকাঁচা, অল্পবয়সিরা কেটে এসে পড়া ঘুড়ি লুট করতে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়েছে। কিন্তু এ বার চার দিক খাঁ খাঁ। কে বলবে আজ, মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজো (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে)? ছাদে ছাদে শোনা যাবে না ‘ভো-কাট্টা’ রব।
মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের পরে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেন কার্যত খালি হয়ে গিয়েছে। তথৈবচ গৌর দে লেনও। ওই সব গলির ভিতরে সিংহভাগই সোনার গয়নার দোকান নয়তো গয়না তৈরির কারখানা রয়েছে। সবই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সোমবার গলির বাইরে দাঁড়িয়ে লোকজন অন্যান্য বছরের বিশ্বকর্মা পুজোর দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন।
তাঁরা জানান, কারখানাই বেশি, তাই দুর্গা পিতুরি কিংবা সেকরাপাড়ায় প্রতি বছরই ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। ঠাকুর আনা থেকে শুরু করে পুজোর আচার অনুষ্ঠানের কাজ— সবই মালিক এবং কর্মীরা একসঙ্গেই করতেন। নীচে যখন পুজোর প্রস্তুতি চলে, তখন ছাদে ছাদে জমে ওঠে কিশোর-তরুণদের পেটকাটি-চাঁদিয়ালের লড়াই। আবার সূর্য ঢললেই সবাই নীচে নেমে ভিড় জমান বিশ্বকর্মা পুজোর মণ্ডপের সামনেই। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি হইচই চলে।
দুর্গা পিতুরি লেনের এক সোনার দোকানের মালিক অভিজিৎ পাল বলেন, ‘‘সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেনে প্রায় তিন-চারশোর মতো নানা ধরনের দোকান রয়েছে। প্রায় সব ক’টিতেই বিশ্বকর্মা পুজো হয়। আনন্দে শামিল হন গলির ভিতরের সাধারণ বাসিন্দারাও। এ বার আমরা নিজেরাই পাড়া থেকে উৎখাত হয়েছি। কারখানা বন্ধ। মালিক-কর্মী কেউই কারখানায় ঢুকতে পারছেন না। কী করে আর পুজো হবে?’’
সেকরাপাড়ার পাশে গৌর দে লেনের বাসিন্দা লীলা দে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বিশ্বকর্মা পুজোয় ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর খুব চল আছে। দুই পাড়ার মধ্যে ঘুড়ি কাটার প্রতিযোগিতা হয়। এমনকি বাইরে থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর দক্ষ লোকজনকেও ডাকা হয়।’’ পাড়ার আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মধ্য কলকাতায় এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে চলে যাওয়া যায় সহজে। কোনও ছাদে ঘুড়ি কেটে পড়লে তা লুট করতে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে ঝুঁকি নিয়ে টপকে যায় পাড়ার ছেলেরা। জানি না কবে সেই পরিবেশ ফিরবে।’’
দু’সপ্তাহ আগে দুর্গা পিতুরি লেনের ভিতরে বন্ধ কারখানা থেকে ব্যবসায়ীরা মালপত্র বার করছিলেন। এক ব্যবসায়ীকে দেখা যায় রাস্তার উপরে বিশ্বকর্মার ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে সোমবার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওই দিন যেন জিনিসপত্রের সঙ্গে বিশ্বকর্মাও বেরিয়ে এসেছিলেন। তখনই মনে হয়েছিল, এ বার বোধ হয় আর পুজো হবে না। আশঙ্কা সত্যি হল। জানি না কত দিনে সব ঠিক হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy