প্রস্তুতি: অনুশীলনে ব্যস্ত এক ওয়াটারপোলো খেলোয়াড়। সোমবার, কলেজ স্কোয়ারে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পেশাদার সাঁতারুদের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার অনুমতি আগেই দিয়েছিল কেন্দ্র। গত মাসে সর্বসাধারণের জন্য সুইমিং পুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই মতো সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবগুলি প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। তবে সেই সব ক্লাবের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সুইমিং পুল খুলে গেলেও কোভিড পরিস্থিতিতে সাঁতার শিখতে আসতে চাইছেন না অনেকেই। ফলে অন্য বার যেখানে এত দিনে প্রতিটি ক্লাবেই ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যায়, সেখানে এ বার নতুন সদস্য সংখ্যা হাতে গোনা।
ক্লাবকর্তাদের মতে, কোভিড-ভীতির কারণেই এ বছর সাঁতার প্রশিক্ষণে নতুন মুখের দেখা সে ভাবে মিলছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলই খোলেনি, সেখানে ছেলেমেয়েদের সাঁতার শিখতে পাঠানো কতটা নিরাপদ হবে— সেটাও ভাবাচ্ছে বহু অভিভাবককে। তাই সাঁতার শিখতে পাঠানোতেও অনীহা রয়েছে তাঁদের।
কলেজ স্কোয়ারে সাঁতার প্রশিক্ষণের একাধিক ক্লাব রয়েছে। পয়লা বৈশাখ নাগাদ ওই সব ক্লাবের বেশির ভাগ খুলে যায়। ওই ক্লাবগুলির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত মাসে সুইমিং পুল খোলার নির্দেশ আসার পরেই কলেজ স্কোয়ারের পুরনো জল ফেলে নতুন জল ভরার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনকি ক্লাবের ভিতরের ইন্ডোর সুইমিং পুলের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। কিন্তু এত আয়োজনই সার, এখনও পর্যন্ত নতুন মুখের দেখা নেই। কলেজ স্কোয়ারের একটি ক্লাবের কর্মকর্তা সন্তোষ দাস বলেন, ‘‘পুরনো সদস্য যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকে সদস্যপদ নবীকরণ করালেও নতুনদের দেখা নেই। আমাদের ক্লাবে ৪০০ থেকে ৫০০ জন পুরনো সদস্য আছেন। আর প্রতি বছর সাঁতার শিখতে ১৪০০ থেকে ১৫০০ জনের মতো ভর্তি হয়। অথচ এ বছর এখনও নতুন কেউ আসেনি বললেই চলে।’’ তিনি আরও জানান, আগামী ১৭ মার্চ থেকে ইন্ডোর সুইমিং পুল খুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও প্রশিক্ষণ নিতে নতুন শিক্ষার্থী প্রায় ভর্তি হচ্ছে না বললেই চলে।
রবীন্দ্র সরোবরে একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবের কর্তা অমিত বসু জানালেন, অন্য বছর এত দিনে সাঁতার শিখতে হাজারখানেক নতুন মুখ নাম লিখিয়ে ফেলে। অথচ এ বার খোঁজ নিয়ে গিয়েছে মাত্র ২০-২২ জন। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন সদস্য তো দূর অস্ত্, বর্তমান সদস্যেরাই কম আসছে। সোমবার থেকে সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল খুলে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এসেছে মাত্র ৮-৯ জন। কোভিড-ভীতি এখনও কাটেনি বলেই এই অবস্থা।’’
অমিতবাবুর মতে, তাঁদের ক্লাবে খুদে সাঁতারুর সংখ্যা বেশ ভালই। স্কুলের পরে সাঁতার শিখতে ওই ক্লাবে ভিড় জমায় তারা। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকায় এ বার এখনও পর্যন্ত তাদের দেখা মেলেনি।
হেদুয়ার পুকুর সংলগ্ন একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবের কর্মকর্তা সনৎ ঘোষ বলেন, ‘‘হেদুয়ার জল পরিষ্কার করার কাজ চলছে। সব ঠিকঠাক চললে সাঁতার শুরু হবে পয়লা বৈশাখ থেকে। কিন্তু খুব কম সংখ্যক অভিভাবকই এ বার নতুন ভর্তির জন্য খোঁজ নিয়েছেন।’’ লেক টাউন এলাকার একটি ক্লাবে ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্য এখনও শুরুই হয়নি বলে জানাচ্ছেন সেখানকার প্রশিক্ষক রাজু কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘‘এপ্রিলে সুইমিং পুল খুলতে পারব কি না, সেটাই এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনও পর্যন্ত সুইমিং পুলের জল পরিষ্কার করা হয়নি। অন্য বছর জানুয়ারির প্রথমেই আমাদের ক্লাবে নতুন সদস্যদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। এ বার তা শুরুই হয়নি।’’
এই সব ক্লাবের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত বছরে অতিমারি পরিস্থিতির কারণে সাঁতার প্রশিক্ষণ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কিন্তু এ বারেও সাঁতার শিখতে কেউ না এলে ক্লাব চলবে কী ভাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে তাঁদের। সন্তোষবাবুর আশঙ্কা, ‘‘এ বার প্রশিক্ষণের জন্য যা যা খরচ প্রয়োজন, সবই হবে। অথচ সে ভাবে ভর্তি না হলে ক্লাব চালানোর খরচই তো উঠবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy