সাফ: পরিষ্কার করা হচ্ছে ইউনিয়ন রুমের ভাঙা জিনিসপত্র। শনিবার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
আরএসএসের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) এক সদস্যের সঙ্গে ক্লাস না করতে চেয়ে এ বার স্মারকলিপি জমা পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘অ্যাডাল্ট কন্টিনিউয়িং এডুকেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন’ বিভাগের প্রধানের কাছে জমা পড়া ওই স্মারকলিপিতে সুরঞ্জন সরকার নামে এক ছাত্রের নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাঙচুর হওয়া ইউনিয়ন রুমে ঢুকে দেওয়ালে এবিভিপি লিখে দিতে দেখা গিয়েছে ওঁকে। ওঁর সঙ্গে আর কোনও পড়ুয়াই ক্লাস করতে চান না। ওঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও এবং হেনস্থার ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রীকে উদ্ধার করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঘেরাও হতে হয়ে রাজ্যপালকেও। ওই ঘটনার পরে শিক্ষা মহলের বড় অংশেরই প্রশ্ন, তবে কি বিরোধী মত শোনার সহনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন পড়ুয়ারা? এ দিনের স্মারকলিপির জেরে এই প্রশ্নই আরও জলবাতাস পাবে বলে মত তাঁদের। সুরঞ্জন নামে ওই ছাত্র অবশ্য বললেন, ‘‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী কোনও কাজ করে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় তার বিচার করবে। আমি মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়েছি। কেউ এ ভাবে আমাকে বার করে দিতে পারেন না।’’
সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন (মাস কমিউনিকেশন) বিভাগের ছাত্র সুরঞ্জন এবিভিপি-র রাজ্য কমিটির কার্যনির্বাহী সম্পাদক। শুক্রবার থেকেই যাদবপুর ক্যাম্পাসে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি ছবি ঘুরছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অন্ধকার ইউনিয়ন রুমের দেওয়ালে মোবাইলের আলো জ্বেলে এবিভিপি লিখছেন সুরঞ্জন। সেই ছবি নিয়েই শুক্রবার সন্ধ্যায় সরব হন তাঁর বেশ কয়েক জন সহপাঠী। যাদবপুরে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন পড়ানো হয় ‘অ্যাডাল্ট কন্টিনিউয়িং এডুকেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন’ বিভাগের অধীনে। বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথি চক্রবর্তীকেই স্মারকলিপি দেন তাঁরা। পিনাকী ধোলে নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভেঙেছে এবিভিপি। আমাদের সহপাঠীদের মারধর করেছে। ইউনিয়ন রুমে ঢুকে এবিভিপি লিখে দিয়েছে। এমন একটি সংগঠনের কারও সঙ্গে ক্লাস করতে আমাদের রুচিতে বাধে। ও এখানে থাকলে আমরা ক্যাম্পাস ছেড়ে দেব।’’ এক ছাত্রীর বক্তব্য, ‘‘এবিভিপি যে ভাবে হুমকি দিচ্ছে, তাতে আমরা কেউ নিরাপদ নই। এমন এক জনের সঙ্গে পড়াশোনা করতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এই স্মারকলিপি গণতন্ত্রমুখী ছাত্রদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ওঁরা দখলদারি মেনে নেন না। সহপাঠী এসে দখলদারি করছেন, ভাঙচুর করছেন, তা ওঁরা কখনওই মেনে নেবেন না।’’ সুরঞ্জন পাল্টা বললেন, ‘‘কীসের দখলদারি? ইউনিয়ন রুমে এসএফআই লেখা থাকলে এবিভিপি-ও লেখা থাকতে পারে। গত কয়েক বছর তো নির্বাচনই হয়নি। তা হলে ওই ইউনিয়ন রুম ওঁদের কী করে হল?’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘যাদবপুর স্রেফ নকশালদের জায়গা নয়। এবিভিপি ওখানে অনুষ্ঠান করতে পারবে না, এটা কোথায় লেখা আছে? ওই ছাত্র যাতে ক্লাস করতে পারেন, তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।’’
পার্থসারথিবাবু বললেন, ‘‘ডেপুটেশন পেয়েছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’’ কলকাতার এক কলেজশিক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ অবশ্য বললেন, ‘‘যাঁরা ক্লাস করতে চাইছেন না, তাঁদেরই বরং ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার করে দেওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy