অবসন্ন: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে তেষ্টা মেটাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। শনিবার, বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পরীক্ষার হলে পৌঁছনোর আগেই গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ওরা। মনে হচ্ছে, ঘামে সপসপে জামাটা বদলে নিতে পারলে ভাল হয়। আবার ঠা ঠা রোদে বাড়ি ফিরেও এতটাই ক্লান্তি চলে আসছে যে, সন্ধ্যাবেলায় পড়তে বসেও ঘুমে চোখ বুজে যাচ্ছে। পরের পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ঠিক মতো নেওয়া যাচ্ছে না।
এপ্রিলের তীব্র গরমের মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষা চলছে। অন্যান্য বার মার্চ মাসে এই দুই পরীক্ষা হলেও এ বার করোনার জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মতে, গরমে সুস্থ থেকে পরীক্ষা দেওয়াটাই এখন একটা চ্যালেঞ্জ। অনেকেই জানালেন, গরমের মোকাবিলা করে তাঁদের ছেলেমেয়েরা যেমন পরীক্ষা দিচ্ছে, তেমনই তাঁরাও তিন ঘণ্টা স্কুলের বাইরে এই প্রবল তাপের মধ্যে অপেক্ষা করছেন। অনেকে এর ফলে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন।
শনিবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের কয়েক জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে জানাল, অঙ্কের প্রস্তুতি খুব ভাল হয়নি। কারণ, ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। তাদের মতে, অঙ্কের ক্লাস অফলাইনে হলেই ভাল হত। এক দিকে প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ, অন্য দিকে এই গরম— সব মিলিয়ে হলে ঢোকার আগেই নেতিয়ে পড়ছে পরীক্ষার্থীরা। একটা অবসন্ন ভাব চলে আসছে তাদের মধ্যে।শহরের বিভিন্ন স্কুল জানিয়েছে, এই গরমে পরীক্ষা চলছে বলে তারাও সাধ্যমতো পরীক্ষার্থীদের স্বস্তিতে রাখার চেষ্টা করছে। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী জানালেন, পরীক্ষার্থীদের জন্য ঠান্ডা জলের ব্যবস্থা রাখছেন তাঁরা। কারও যদি মাথা ঘোরে বা ঘাড়ে-মুখে জল দিতে হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। সঙ্গে পাখার ব্যবস্থা তো আছেই। উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষক সৌগত বসু জানালেন, উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ থেকে দ্বাদশে ওঠার পরীক্ষার জন্য যে ঘরগুলি বাছা হয়েছে, সেগুলি প্রায় সবই একতলায়। তিনি বলেন, “ছাদে সরাসরি রোদ পড়ায় দোতলার ঘরগুলি তেতে থাকে। একতলায় ততটা গরম লাগে না।”
কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এ বার হোম সেন্টার হওয়ায় খুব বেশি পরীক্ষার্থী একসঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে না। ফলে এক ঘরে অনেকে মিলে পরীক্ষা দিলে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়, সেটা এ বার নেই। পরীক্ষার্থীদের জন্য ওআরএস-এর ব্যবস্থাও করে রেখেছি।” খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন বলেন, “অনেক দিন স্কুল বন্ধ থাকায় পাখাগুলি পরীক্ষা করানো হয়েছে। কয়েকটি ঘরে অতিরিক্ত পাখা লাগিয়েছি।” শিক্ষকেরা জানালেন, একাদশ থেকে দ্বাদশে ওঠার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে দুপুর ২টোয়। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের আসতে হচ্ছে। তাই তাদের ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
গরমে সুস্থ থেকে পরীক্ষা দিতে সঙ্গে বেশি করে জল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “এই গরমে জলবাহিত অসুখ বেশি হয়। তাই পরীক্ষার্থীরা যেন সব সময়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে জল সঙ্গে রাখেন। গরম থেকে বাড়ি ফিরেই ঠান্ডা জল, ঠান্ডা পানীয় খাওয়া বা এসি চালানো চলবে না। হাল্কা খাবার খেতে হবে। স্কুলের পোশাক সুতির হলে ভাল। সেই সঙ্গে অভিভাবকেরা যখন অপেক্ষা করবেন, তখন তাঁরাও যেন জল সঙ্গে রাখেন।”
মেডিসিনের আর এক চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “নুন-চিনির জল বা ওআরএস বেশি করে সঙ্গে রাখতে হবে। ক্লান্ত লাগলে সেই জল একটু খেয়ে নিলে ক্লান্তি খানিকটা দূর হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy