পরিচর্যা: স্কুলের ছাদে শিক্ষিকাদের সঙ্গে বাগানের তত্ত্বাবধানে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
কোনও দিন পাতে পড়ছে বাঁধাকপির তরকারি। কোনও দিন আবার ফুলকপির ডালনা বা শেষ পাতে টোম্যাটোর চাটনি। মিড-ডে মিলের রোজকার মেনুর সঙ্গে অতিরিক্ত এই সব পদও প্রায় নিয়মিত পাতে পড়ছে সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের। আর অতিরিক্ত এই সব খাবারের স্বাদ একটু বেশিই ভাল লাগছে ছাত্রীদের। কারণ, স্কুলের ছাদ-বাগানে নিজের হাতে ওই সব আনাজ ফলাচ্ছে তারা। শীতের মরসুমে স্কুলের ছাদে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো, পেঁপে, ঝিঙে, লঙ্কা, লেবুর ফলন হচ্ছে। এমনকি, হচ্ছে হরেক রকমের শাকও।
সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের সামনের একচিলতে জায়গায় হয় পাড়ার দুর্গাপুজো। ফলে পুজোর প্রায় মাস দুয়েক আগে থেকে সেখানে মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি চলে। ওই একফালি জায়গায় বাগান করা সম্ভব ছিল না পড়ুয়াদের পক্ষে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয়, সে কথাই প্রমাণ করেছেন ওই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষিকারা। বাগানে আনাজ ফলাতে তাঁরা বেছে নিয়েছেন স্কুলবাড়ির ছাদকে।
স্কুলবাড়ির চারতলার একটি ছাদ ১২০০ বর্গফুটের, অপরটি ৫০০ বর্গফুটের় সেখানেই বাঁশের কাঠামো বানিয়ে মাটি, সার দিয়ে তৈরি হয়েছে বাগান। তবে আনাজ ফলাতে ব্যবহার করা হয়নি কোনও রকম কীটনাশক। শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, সরাসরি ছাদের উপরেই মাটি দিয়ে বাগান করলে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই বাঁশের কাঠামো তৈরি করে তার উপরে মাটি এবং সার দেওয়া হয়েছে। সেখানেই সারা বছর হরেক রকমের আনাজের চাষ হচ্ছে। গরমে বেগুন, ঢেঁড়স, পটলের চাষ হয় সেখানে। আর শীতের ছাদবাগান ভরে থাকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো, বিট, গাজর ও নানা রকমের আনাজে। এই সব আনাজ দিয়ে তৈরি পদ প্রায় প্রতিদিন পাতে পড়ে ছাত্রীদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন বলেন, ‘‘২০১৯ সাল থেকে এই কিচেন গার্ডেন শুরু হয়েছে আমাদের স্কুলে। শিক্ষা দফতর থেকে প্রচুর সাহায্য পেয়েছি। আমাদের স্কুলের যে বিভিন্ন ক্লাসের হাউস আছে, স্কুলে শিশু সংসদ আছে, সেই শিশু সংসদের ছাত্রীরাই এই বাগানের দেখাশোনা করে। তা ছাড়া ওদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও রয়েছেন।’’
শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন ছাত্রীর জন্য প্রতিদিন মিড-ডে মিল রান্না হয়। আর ছাদে ফলানো আনাজ দিয়েই হয় সেই সব রান্না। ওই সব আনাজ দিয়ে সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন দিন অতিরিক্ত পদ দেওয়াই যায় ছাত্রীদের পাতে।
দীপালি মণ্ডল, চৈতালি মুখোপাধ্যায়, তনুশ্রী দত্ত-সহ স্কুলের শিক্ষিকারা জানালেন, ২০১৯ সালে ওই ছাদবাগান শুরু করা হলেও অতিমারির সময়ে ২০২০ ও ২০২১ সালে স্কুল বন্ধ ছিল। কিন্তু তখনও বাগানের পরিচর্যায় কোনও ত্রুটি হয়নি। শিক্ষিকারা বিভিন্ন কারণে যখনই স্কুলে এসেছেন, তখনই বাগানের পরিচর্যা করেছেন। সে সময়ে ছাদে যে সমস্ত আনাজ ফলত, তা মাসের শুরুতে মিড-ডে মিলের চাল, ডালের সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হত ছাত্রীদের। এর পরে ২০২২ থেকেপুরোদমে স্কুল চালু হয়ে যেতে ফের ছাদবাগানের পরিচর্যার ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে ছাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy