সাক্ষী: সল্টলেকে একটি নেড়াপোড়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমার (সবুজ পাঞ্জাবি পরিহিত)। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো ঠেকাতে ‘সক্রিয়’ হয়নি প্রশাসন। ঠিক একই ভাবে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও দোলের আগে নেড়াপোড়া ঠেকাতে সক্রিয়তা দেখা গেল না কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পুরসভা ও প্রশাসনের মধ্যে। উল্টে রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টিকে ‘ভাবাবেগ’-এ হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয় বলেই দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন।
রবিবার ও সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা, বিধাননগর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নেড়াপোড়ার নামে পোড়ানো হল দেদার বর্জ্য। বহু জায়গাতেই আগুনের শিখা ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উঠেছে। সেই ছবি দেখা গিয়েছে সল্টলেক-সহ বিধাননগরের বিভিন্ন জায়গা, মধ্য, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতাতেও।
এর আগে বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে দু’ দফায় জরিমানা করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে যেখানে পাতা ও আবর্জনা পোড়ানোকেও চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেখানে রবিবার দাউদাউ শিখা ও ধোঁয়া নিয়ে ওঠা আগুন নেভাতে প্রশাসনের তরফে কোনও হেলদোল দেখা গেল না।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের অবশ্য যুক্তি, ‘‘এটা চিরাচরিত প্রথা। এবং অনেকের আবেগ জড়িত। এক দিনে এটা বন্ধ করা যাবে না।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী তথা বিধাননগরের তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসুর গলাতেও। তিনি জানান, উৎসবকে ঘিরে মানুষের আবেগ রয়েছে। সেই বাস্তব পরিস্থিতিও বুঝতে হবে। দূষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। দূষণ রোধে চেষ্টাও করা হচ্ছে। সচেতনতার প্রসারের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সল্টলেকে নেড়াপোড়ার কয়েকটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিধাননগর পুরসভার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) রাজেশ চিরিমার নিজেই। তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর আগে থেকে ওই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’’
যদিও নেতাদের এই ‘আবেগ ও চিরাচরিত প্রথা’র উল্লেখ একেবারেই দায় এড়ানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলেন, ‘‘এটি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করা প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশের পরেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করা যায়নি। তবে চেষ্টা তো করতে হবে।’’
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোথায় কোথায় নেড়াপোড়া বা হোলিকা দহন হয়েছে, সে সম্পর্কে পুরসভাগুলির কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট বিশ্লেষণের পরে প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়।’’
রবীন্দ্র সরোবরের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবশ্য দোল ও হোলিতে বহিরাগতদের ঠেকাতে দু’দিন গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।
রাজ্য পরিবেশ দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি পুরসভার কাছেই নেড়াপোড়া নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। এ বছরে সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিসি ব্লকের বাসিন্দারা দূষণ রোধে তাঁদের ব্লকের নেড়াপোড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে লিখিত ভাবে জানান। বাস্তবে দেখা যায়, সেই অনুষ্ঠানটি বিসি ব্লক থেকে সরে গিয়ে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিবি ব্লকে হয়। সেই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর বিধাননগরের মেয়র পারিষদ রাজেশবাবু।
সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘আমরা পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। উৎসব, আবেগের যুক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এটা হতাশাব্যঞ্জক।’’
বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশের কর্তাদেরও দাবি, এ নিয়ে থানাগুলির কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy