গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার পর ঘরে-বাইরে বেজায় চাপে পড়েছিল কলকাতা পুরসভা। তার পর থেকেই বেআইনি নির্মাণ রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। সেই আবহে এ বার কলকাতার বেআইনি নির্মাণগুলির নিয়মিতকরণের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে খবর, সেই পদক্ষেপে এখন আর চাইলেই কোনও বেআইনি নির্মাণের সহজ পথে নিয়মিতকরণ সম্ভব হবে না। কলকাতা পুরসভার কোনও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার যদি ওই নির্মাণ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে ‘স্ট্রাকচারাল সার্টিফিকেট’ বা কাঠামোগত শংসাপত্র দেন, তবেই ওই নির্মাণের নিয়মিতকরণ সম্ভব হবে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নিয়ম করে কলকাতা পুরসভায় বেআইনি নির্মাণের নিয়মিতকরণের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এত দিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে বেআইনি নির্মাণের নিয়মিতকরণ সম্ভব হত। কিন্তু গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পড়ার পর সেই নিয়মে বদল আনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ বার থেকে কোনও বেআইনি নির্মাণের নিয়মিতকরণের জন্য ‘স্ট্রাকচারাল সার্টিফিকেট’ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কিন্তু পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে পাওয়া যাবে এই ‘স্ট্রাকচারাল সার্টিফিকেট’? আগের মতোই শংসাপত্র পেতে কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন জানাতে হবে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে পুরসভার স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সংশ্লিষ্ট নির্মাণের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব সঠিক ভাবে পাওয়া গেলে মিলতে পারে ওই শংসাপত্র। প্রাথমিক ভাবে দেখা হবে, সংশ্লিষ্ট নির্মাণের গঠন ঠিক রয়েছে কি না। সেই নির্মাণের কোনও অংশ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দেখেন, ওই নির্মাণ ভেঙে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তবেই তিনি ‘স্ট্রাকচারাল সার্টিফিকেট’ দেবেন।
আরও পড়ুন:
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয় নজরদারির জন্য মাত্র এক জন বিশেষ আধিকারিক (বিল্ডিং) রয়েছেন। নতুন এই নিয়ম চালু হয়ে গেলে বাড়তি আরও কয়েক জন আধিকারিককে এই কাজে নিয়োগ করা হবে বলেই কলকাতা পুরসভার সূত্রে খবর। তবে নতুন নিয়ম কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলছে কলকাতা পুরসভার একাংশ। প্রশ্ন উঠছে, বেআইনি নির্মাণ করতে শহরের প্রোমোটারেরা পুর আধিকারিকদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে থাকেন। সেই প্রলোভনের ফাঁদে পড়েন অনেক পুর অধিকারিক। ‘স্ট্রাকচারাল সার্টিফিকেট’ পেতে সেই প্রোমোটারেরা সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে আর্থিক প্রলোভন দেখাবেন কি না, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে তার ভালমন্দ বিষয়গুলি বিবেচনা করে দেখার পক্ষপাতী কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একাংশের আধিকারিক। কারণ, গার্ডেনরিচের ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি মুখ পুড়েছিল তাঁদের বিভাগেরই।