Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
WB Health Department

মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে মেডিক্যাল কাউন্সিলের অফিসঘরের অনুরোধ, চিঠি দিলেন স্বাস্থ্যকর্তাই! 

এই প্রশ্নও উঠছে, কাজের ব্যাপ্তির জন্য অফিসের প্রয়োজন থাকলে উত্তরবঙ্গের যে কোনও জায়গায় ভাড়ায় বা প্রশাসনিক কোনও কার্যালয়ে তো ঘর নেওয়া যেত। তা না করে সরাসরি মেডিক্যাল কলেজ বাছা হল কেন?

স্বাস্থ্য ভবন।

স্বাস্থ্য ভবন। —ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৭
Share: Save:

কাজের পরিধি বৃদ্ধির জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। তার জন্য ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে দু’টি ঘরের বন্দোবস্ত করতে চিঠি পাঠিয়েছেন খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। সম্প্রতি সেই চিঠি ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্বশাসিত একটি সংস্থা কী ভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে নিজেদের অফিস করতে পারে?

সূত্রের খবর, গত ২১ মার্চ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক জানিয়েছেন, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল তাদের উত্তরবঙ্গের অফিসটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের তরফে স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার পরেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে দু’টি ঘর বরাদ্দের অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। দিন কয়েক আগে শাসকদলের এক জুনিয়র চিকিৎসক-নেতা সেই চিঠি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এবং তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও পরবর্তী কালে ওই নেতা পোস্টটি মুছে দেন।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে তাদের এমন সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করা হয়েছে। কাউন্সিলের সদস্য চিকিৎসক কৌশিক বিশ্বাসের দাবি, ‘‘কাজের বিকেন্দ্রীকরণের জন্যই উত্তরবঙ্গে অফিস চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে সেখানকার বিভিন্ন জেলার লোকজন সহজে তাঁদের অভিযোগ জানাতে পারেন। কলকাতায় আসার অসুবিধার জন্য অনেকেই অভিযোগ জানাতে পিছিয়ে যান।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে অফিস কেন? কৌশিকের দাবি, ‘‘রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয় এখন অনলাইনে হলেও অন্য অনেক কাজকর্ম রয়েছে, যা চিকিৎসকদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই ওই মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে অফিস চালুর সিদ্ধান্ত।’’

এই প্রশ্নও উঠছে, কাজের ব্যাপ্তির জন্য অফিসের প্রয়োজন থাকলে উত্তরবঙ্গের যে কোনও জায়গায় ভাড়ায় বা প্রশাসনিক কোনও কার্যালয়ে তো ঘর নেওয়া যেত। তা না করে সরাসরি মেডিক্যাল কলেজ বাছা হল কেন? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কথায়, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই মতো আমিও অধ্যক্ষকে অনুরোধ করেছি। যদি অতিরিক্ত ঘর থাকে, দেওয়া হবে।’’ তবে, চিকিৎসক শিবিরের একটি বড় অংশ এই ঘটনার নেপথ্যেও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতাসীন ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন। তাঁদের অভিযোগ, কাউন্সিলের শীর্ষ পদে থাকা এক সদস্যকে উত্তরবঙ্গে নির্দিষ্ট বসার জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন যে আদতে প্রহসন ছাড়া কিছু নয়, সেটা সকলেই জানেন। কলকাতার অফিস কার্যত রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আসলে এটা উত্তরবঙ্গেও একটা আখড়া বানানোর প্রচেষ্টা।’’ মানসের প্রশ্ন, ‘‘চিকিৎসা-শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অফিস কেন কোনও মেডিক্যাল কলেজে হবে? দেশে কোথাও কি এমন উদাহরণ রয়েছে? উত্তরবঙ্গে কি সরকারের জায়গা বা ঘরবাড়ির অভাব?’’ কাউন্সিলের সদস্যদের অবশ্য দাবি, শিক্ষামূলক সেমিনার থেকে শুরু করে জুনিয়র চিকিৎসকদের সুবিধার দিকটিও সহজে দেখার জন্যই মেডিক্যাল কলেজ চত্বরকে বাছা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE