প্রতীকী ছবি।
গত বছরে সংখ্যাটা ছিল প্রায় আট হাজার। আর এ বছরে অক্টোবর শেষ হওয়ার আগেই সেই সংখ্যা ১৪ হাজার পেরিয়েছে!
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালে ‘ফিশারেক্টমি’ অর্থাৎ মলদ্বারের ফিশার বা ঘায়ের অস্ত্রোপচারের সংখ্যা এমন বিপুল হারে বাড়তে দেখেই দুর্নীতির আঁচ করেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। খোঁজখবর নিতেই প্রমাণ মিলেছে যে, সেই আশঙ্কাই সত্যি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বহু বেসরকারি হাসপাতাল অপ্রয়োজনে শুধু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে টাকা নেবে বলে ফিশারেক্টমি করছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ, অস্ত্রোপচার না করেই স্বাস্থ্যসাথী থেকে ফিশারেক্টমির টাকা নেওয়া হচ্ছে। যে হেতু এই অস্ত্রোপচারে সেলাই হয় না, বাইরে থেকে দেখে অথবা মেডিক্যাল অডিটে অস্ত্রোপচার হয়েছে কি না তা বোঝা যায় না— তাই এর ফায়দা তুলছেন কিছু অসাধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর পরেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বিশেষ উপদেষ্টা কমিটি ফিশারেক্টমি অস্ত্রোপচারে ‘গেটকিপিং’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ, এ বার থেকে চাইলেই কোনও রোগীর ফিশারেক্টমি করতে পারবে না কোনও বেসরকারি হাসপাতাল। আদৌ সেই রোগীর ফিশারেক্টমি প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আগে তাঁকে কোনও সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে হবে। সেখানকার চিকিৎসকেরা লিখিত ভাবে অস্ত্রোপচারের কথা বললে তবেই তা করতে পারবে বেসরকারি হাসপাতাল। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রোগী-স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া এতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হওয়াও আটকানো যাবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত হারে ফিশারেক্টমি অস্ত্রোপচারে রাজ্যের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে নদিয়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ। গত বছর রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথীতে আট হাজার ফিশারেক্টমির মধ্যে শুধু নদিয়াতেই হয়েছিল ৩৮০০টি। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘এই বিপুল সংখ্যা দেখেই খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায়, অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচার বা তা না করেও অনেক ছোট হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এর জন্য নির্ধারিত ১১৬৪৪ টাকা এবং মাঝারি হাসপাতাল ১২৯৬০ টাকা নিচ্ছে। তবে বড় হাসপাতালগুলি এই অস্ত্রোপচার খুব একটা করে না।’’
রাজ্যে নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শেখ আলহাজউদ্দিনও ফিশারেক্টমি নিয়ে এক শ্রেণির হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের দুর্নীতির কথা মেনে বলছেন, ‘‘এই নিয়ে ওদের হুঁশিয়ারও করেছিলাম। কিন্তু ওরা কান দেয়নি। জেলার অনেক হাসপাতাল দালাল লাগিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে, এমন উপভোক্তাদের জোগাড় করে তাঁদেরও এই দুর্নীতিতে শামিল করছে। সেই উপভোক্তার নাম ও কার্ড নম্বর ‘লক’ করা হচ্ছে ফিশারেক্টমির জন্য। আসলে সেটা হচ্ছে না। কিন্তু অস্ত্রোপচারের টাকা এলে তা ওই হাসপাতাল, দালাল এবং উপভোক্তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে।’’
অতীতে ছানি অস্ত্রোপচার এবং সিজ়ার নিয়েও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিমার টাকা পেতে অপ্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণে এই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রেও ‘গেটকিপিং’ চালু করলে ছানির অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক হাসপাতাল সিজ়ার করে তাকে ‘অ্যাপেন্ডেক্টমি’ হিসাবে দেখিয়ে স্বাস্থ্যসাথী থেকে টাকা নিতে শুরু করে। নজরদারি বাড়িয়ে সেটাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
সেই সব প্রসঙ্গ টেনে আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। এমন সমাধানসূত্র বার করা দরকার, যাতে ফিশারেক্টমি একেবারে বন্ধ না হয়ে যায়। আবার তার অপব্যবহারও না হয়।’’
ফিশারেক্টমিতে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথীর উপদেষ্টা কমিটি আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন, এ বার থেকে কোনও সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির সময়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বা অন্য সরকারি বিমার আওতায় তিনি থাকলে সেই কার্ডের নম্বর বাধ্যতামূলক ভাবে নথিভুক্ত করে রাখতে হবে। এ ছাড়া এত দিন রাজ্যের কিছু অংশে সিজ়ারে নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এ বার তা বাড়িয়ে গোটা রাজ্যে চালু করা হল। অর্থাৎ গোটা রাজ্যেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতাল সিজ়ার করতে চাইলে আগে সরকারি হাসপাতালের অনুমতি নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy