ধসপ্রবণ: হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে সমস্যা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
শহরের আবর্জনা ফেলার আর জায়গা নেই। আবর্জনা জমতে জমতে ভাগাড়ের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৬০ ফুটে! অর্থাৎ প্রায় ছ’তলা বাড়ির সমান। যে কোনও মুহূর্তে ধস নেমে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। পরিস্থিতি দেখে তাই রাজ্য সরকার বায়ো-মাইনিং পদ্ধতিতে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের উচ্চতা কমানোর নির্দেশ দিল হাওড়া পুরসভাকে।
বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিকল্প জায়গা খুঁজে সেখানে আবর্জনা ফেলতে প্রায় ১২ বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশের পরেও টনক নড়েনি হাওড়া পুরসভার। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘আমারই দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৭ সালে ভাগাড় সরাতে বলেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি। রাস্তার উপরেই আবর্জনা পড়ে থাকায় রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। হচ্ছে যানজট। এখন কঠিন বর্জ্য অপসারণের নতুন নিয়ম হয়েছে। তা না মানলে হাওড়া পুরসভাকে কোটি কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হবে।’’
বিশেষজ্ঞেরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, আগামী বছরের পরে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আর আবর্জনা ফেলার জায়গা থাকবে না। অবিলম্বে বিকল্প জায়গা বার করতে হবে। এর পরেই রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, বায়ো-মাইনিং পদ্ধতিতে আলাদা করা হবে মাটি ও প্লাস্টিক। যেখানে মাটির প্রয়োজন, সেখানে সেই মাটি নিয়ে যাওয়া হবে। এ ভাবেই কমানো হবে ভাগাড়ের উচ্চতা।
হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘বায়ো-মাইনিং পদ্ধতিতে ভাগাড়ের উচ্চতা কমাতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে এই পদ্ধতিতে যেমন মাটি সরানো হয়েছে, তেমনই বর্জ্য থেকে সার তৈরির পরিকল্পনাও সাফল্য পেয়েছে সেখানে।’’
জায়গা না-থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই বেলগাছিয়া ভাগাড়ের পাশে একটি নতুন ভাগাড় তৈরি করে আবর্জনা ফেলার কাজ চলছে। কিন্তু সেটিও ক্রমাগত ভরে আসছে। অন্য দিকে মূল ভাগাড়টি প্রায় ছ’তলা বাড়ির সমান উঁচু হয়ে যাওয়ায় আবর্জনা বোঝাই লরি সেখানে উঠতে পারে না। পুরসভার খবর, পুরনো ভাগাড়ে জায়গা না থাকায় প্রতিদিন হাওড়া শহরের ৭৫০ মেট্রিক টন আবর্জনা নতুন ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু এক বছর পরে সেখানেও জায়গা থাকবে না বলে জানিয়ে
দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
পুর কমিশনার জানান, ভাগাড়ে জমি রয়েছে প্রায় ১৮ একর। তাই এক জায়গায় আবর্জনা কেটে সমতল করে সেখানে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। তার উপরেই বসানো হবে বায়ো মাইনিং-এর মেশিন। যার সাহায্যে আলাদা করা হবে প্লাস্টিক-সহ নানা অপচনশীল বর্জ্য। পুর কমিশনার আরও জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে ভাগাড়ের উচ্চতা কমিয়ে সমান করতে দেড়-দু’বছর সময় লাগবে। ওই জায়গাতেই কঠিন বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের একটি ইউনিট বসানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy