প্রস্তুতি: কার্নিভালের মঞ্চ সাজানোর কাজ চলছে। মঙ্গলবার, রেড রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
নবমীর নিশি কাটতেই দশমীর ভোর। সকাল থেকে রোদ ঝলমলে শহরের আকাশ-বাতাসে কেমন যেন নিঃশব্দে বেজে চলেছে বিদায়ের সুর!
আর হবে না-ই বা কেন! মঙ্গলবার যে পুজোর শেষ। বেলা যত গড়িয়েছে, বিরহের সুর ততই যেন করুণ হয়েছে। বাড়ির ঠাকুরদালান থেকে মণ্ডপ— সর্বত্রই বিদায়ের প্রস্তুতি। মহালয়ার দিন পিতৃতর্পণের পরে প্রতিপদ থেকেই বাঙালির মন ভরে ওঠে আনন্দে। অপেক্ষা শুরু হয় পুজোর। আর সেই দিনগুলিতে আট থেকে আশি, সকলেই মেতে ওঠেন শারদোৎসবের খুশিতে।
অপরাজিতা পুজো থেকে শুরু করে ঘটের সুতো কাটা দিয়ে সূচনা হয়েছিল দশমীর বিদায়পর্ব। দুপুরেই অনেক বাড়ি ও মণ্ডপে প্রতিমা বরণের সঙ্গেই মহিলারা মেতে ওঠেন সিঁদুরখেলায়। বারোয়ারি থেকে কলকাতার অনেক বনেদি বাড়ির প্রতিমাই এ দিন বিকেলের মধ্যে বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। তবে কার্নিভালের জন্য এ বছরও কলকাতা, হাওড়া ও শহরতলির বেশ কিছু বড় পুজোর প্রতিমা এ দিন বিসর্জন হয়নি। উদ্যোক্তারা অবশ্য নিয়ম মেনে ঘট বিসর্জন করেছেন।
আগামী ১১ অক্টোবর রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর শহরের ৭৯টি এবং সংলগ্ন জেলা থেকে আরও কয়েকটি প্রতিমা আসবে ওই উৎসবে। ক্লাবগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুপুর ২টোর মধ্যে প্রতিমা নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে। রেড রোড জুড়ে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী মণ্ডপ। হাজার পাঁচেক বসার আসন থাকছে। কলকাতায় অবস্থিত প্রতিটি বিদেশি দূতাবাসের কর্তা-সহ শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের লোকজন এবং শহরের বিশিষ্ট জনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেখানে। সাধারণ মানুষও থাকতে পারবেন দর্শক হিসেবে।
বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপে চলছে সিঁদুরখেলা। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বরাহনগরের একটি পুজোর উদ্যোক্তা অঞ্জন পাল বললেন, ‘‘মণ্ডপ শূন্য হয়ে গেলে মনটা বড্ড ফাঁকা লাগে। তা-ও কার্নিভালে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আরও কয়েক দিন তো প্রতিমা মণ্ডপে থাকল।’’ কার্নিভালে কোন গাড়ির পরে কোন গাড়ি থাকবে, তা নিয়েই দশমীর সকাল থেকে বেজায় ব্যস্ত বরাহনগরের আর এক পুজোর কর্তা দিলীপনারায়ণ বসু। বললেন, ‘‘এত দিন ছিল পুজোর কয়েক দিন দর্শনার্থী টানার পালা। এ বার কার্নিভালে চমক দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’’
পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই দিন-রাত এক করে চমক দেওয়ার লড়াইয়ে নামেন উদ্যোক্তারা। দ্বিতীয়া কিংবা তৃতীয়ায় পুজোর উদ্বোধন হওয়ার পরেই সেই মণ্ডপে যত জনতার ঢল নামে, ততই নিজেদের প্রচেষ্টাকে সার্থক বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। তবে সেটা প্রায় দশ দিনের ‘লড়াই’ হলেও কার্নিভাল মাত্র এক দিনের। তাই সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উপস্থিত অতিথিদের সামনে কোন পুজো কমিটি বাকিদের টেক্কা দেবে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে ঠান্ডা লড়াই। থিমের মতো কার্নিভালের প্রস্তুতি নিয়েও গোপনীয়তা বজায় রাখছেন সদস্যেরা।
দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্মকর্তা তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের কথায়, ‘‘একাদশী থেকেই কার্নিভালের প্রস্তুতি শুরু করে দেব। কী কী হবে, তার পরিকল্পনা চলছে।’’ কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার ওই সব বড় বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপে এ দিন সকালেও ছিল ঠাকুর দেখার ভিড়। কার্নিভালের প্রস্তুতি আর শেষ বেলার ঠাকুর দেখার আনন্দের মাঝেও দশমীর সারা দিন বেজেছে বিদায়ের সুর।
কনকাঞ্জলি দিয়ে প্রতিমাকে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখের কোণ চিকচিক করেছে অনেকেরই। এক দিকে যখন ঢাকের কাঠি সুর তুলছে, ‘ঠাকুর থাকবে কত ক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’, অন্য দিকে তখন আট থেকে আশির করজোড়ে প্রার্থনা, ‘আসছে বছর আবার এসো’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy