প্রতীকী ছবি।
আর জি কর মান্যতা দেয়। কিন্তু এসএসকেএমে তা খারিজ হয়ে যায়। ডাক্তারি পড়তে ইচ্ছুক এক ছাত্রীকে ‘প্রতিবন্ধী’র মান্যতা দেওয়া নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই মেরুতে দুই সরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড! ঘটনাচক্রে, ওই ছাত্রী যা অভিযোগ করেছেন, তাতে কোন সরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বেশি দক্ষ, তা নিয়েই বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী এবং তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত পরীক্ষার্থী হিসেবে এমবিবিএসের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় আহিরীটোলার বাসিন্দা কৌশিয়া বসুর র্যাঙ্ক হয়েছে ১১২০। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবেদনকারীদের কাউন্সেলিংয়ের আগে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত নথি যাচাই করাতে হয়। এ কাজে দেশ জুড়ে দশটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করেছে এমসিআই, যার একটি হল এসএসকেএম। ‘লাম্বার র্যাডিকিউলোপ্যাথি’ রোগে আক্রান্ত কৌশিয়া জানান, গত ২২ জুন নথি যাচাইয়ের জন্য এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির হন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ৬৮ বছরের বৃদ্ধ বাবা।
ওই মেডিক্যাল বোর্ডের তরফে যে শংসাপত্র কৌশিয়াকে দেওয়া হয়, তাতে লেখা রয়েছে ‘নট এলিজিবল’। কৌশিয়ার কথায়, ‘‘আর জি কর হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে আমাকে ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী বলে শংসাপত্র দিয়েছে। এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা কেন তা মানতে নারাজ, বোধগম্য হচ্ছে না।’’
ওই ছাত্রীর বাবা অসীম বসু জানান, ছোটবেলায় সিঁড়ি থেকে পড়ে চোট পেয়েছিলেন কৌশিয়া। বছর ছ’য়েক আগে আচমকা কোমরের যন্ত্রণায় কাবু হয়ে পড়েন ওই তরুণী। এক অস্থি চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজ়িয়োথেরাপি এবং যোগ ব্যায়াম করে খানিকটা সুস্থ হলেও বছরখানেক আগে ফের পুরনো ব্যথায় ভুগতে শুরু করেন কৌশিয়া। এমআরআই করানো হলে জানা যায়, তিনি ‘লাম্বার র্যাডিকিউলোপ্যাথি’ রোগে আক্রান্ত। ওই রোগ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার তালিকায় পড়ে।
কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত কোনও ওয়ার্ডের বাসিন্দা কতখানি প্রতিবন্ধী, তা ঠিক করার দায়িত্ব বিজ্ঞপ্তি জারি করে চারটি সরকারি হাসপাতালকে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেগুলি হল: আর জি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, এন আর এস এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। আর জি করের শংসাপত্রের নিরিখে ওই ছাত্রীকে প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র দিয়েছে নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতর। কৌশিয়ার বক্তব্য, ‘‘এ সব সরকারি মান্যতার কি কোনও মূল্য নেই!’’
সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, আপত্তি থাকলে আর জি করের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা আলোচনা করতে পারতেন। ২০১৬ সালে সংসদে ‘রাইট টু পারসন উইথ ডিসেবিলিটি’ আইন পাশ হওয়ার পরে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হয়। ওই আধিকারিকের মতে, ‘‘আইনের দ্বারস্থ হলে এক সরকারি হাসপাতালের শংসাপত্র আর এক সরকারি হাসপাতালের অমান্য করার অধিকার রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’’
সমাজকল্যাণ দফতরের আর এক আধিকারিকের বক্তব্য, আর জি করের মেডিক্যাল বোর্ড স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদিত। সেই নিরিখে স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদিত বোর্ডের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরাই বলবেন।’’ কৌশিয়ার শংসাপত্রে এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন, অপথ্যালমোলজি এবং ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকের সই রয়েছে। সেই বোর্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, ‘‘একশো জন শংসাপত্র দিলে ৮৫ জনেরই খারিজ হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশেই এটা ঘটছে। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন এটা হচ্ছে? আমরা দেখেছি, অনেকে নিয়মটা ভাল করে জানেন না। এ ক্ষেত্রে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সারা দেশে দশটি সেন্টার রয়েছে। এসএসকেএমে সন্তুষ্ট না হলে ওই ছাত্রী অন্য কোথাও যেতে পারেন।’’ এসএসকেএম সূত্রের খবর, আর জি কর মেডিক্যাল বোর্ডের নামে যে শংসাপত্র জমা করা হয়েছে, তার বৈধতা নিয়েও এসএসকেএমের বোর্ডের একাংশের সন্দেহ রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে অসীমবাবু বলেন, ‘‘ওই শংসাপত্র জাল প্রমাণ করতে পারলে যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy