ছবি: সংগৃহীত।
ছিঁচকে চুরি বা ছোটখাটো ঘুষ-দুর্নীতি নয়! যা দেখলে শেক্সপিয়রের রাজা লিয়র হয়তো গরিবের তেনা কাপড়ের ছেঁড়া ফুটোয় প্রকট ‘বিচ্যুতি’ বলে উড়িয়ে দিতেন। বড়জোর দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন, ‘প্রভাবশালীর জোব্বা-গাউনের আড়ালে সবই গভীর গোপন (রোবস অ্যান্ড ফার্ড গাউনস হাইড অল)’।
কিন্তু টিভি-র পর্দা, কাগজের প্রথম পাতা থেকে সমাজমাধ্যমে ছড়ানো ছবিতে টাকার পাহাড় দেখে আপামর বঙ্গসন্তানের মাথা ঘুরছে। রুচিশীল গৃহস্থের বারান্দায় বাহারি মানিপ্ল্যান্ট নয়। বরং সত্যজিৎ রায়ের বিশ্ববিশ্রুত ছবি ‘নায়ক’-এর টাকার পাহাড় সহজেমনে পড়ছে, যার চুড়োয় দাঁড়িয়েছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। গড়পড়তা বাঙালি বাড়ির দেওয়ালে আসীন শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী: টাকা মাটি, মাটি টাকা! রাজ্যের জাঁদরেল মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’জনের ফ্ল্যাটে টাকার স্তূপ কী বলছে? কারও রসিকতা, মাটির ঢেলার মতো ঘরময় টাকা পড়ে থাকতে পিতৃপুরুষের জীবদ্দশায় আদৌ কখনও দেখেছে বাঙালি!
শহরের অফিস-পাড়ায় আয়কর বা পুলিশি তল্লাশির সময়ে কদাচ কেউ টাকার বান্ডিল নীচে ছুড়ে দিয়েছেন। মাথার উপরে উড়ন্ত কয়েকটি ৫০০ বা ২০০০ টাকার নোট মুহূর্তের জন্য ‘টাকার বৃষ্টি’ ভেবে থমকেছেন পথচারী। কিন্তু এমন টাকার পাহাড় বাস্তবে দেখা যায়নি। এ যাত্রা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘বান্ধবী’র ফ্ল্যাটে উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্ক খাতায়-কলমে সাড়ে ২২ কোটির মতো। কিন্তু বাজেয়াপ্ত টাকার ছবি আগে এ ভাবে লোকের হাতের ফোনে ছড়িয়ে পড়েনি।
কেউ কেউ চোরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, দেশে জাতীয় বা রাজ্য স্তরে নানা চক্রের কয়েক হাজার কোটির কেলেঙ্কারি পাশে ২০-২২ কোটি তো সামান্য! এই নিয়ে আদিখ্যেতায় গরিব বাঙালির দৈন্যদশাই ফুটে উঠছে। হয়তো নোটের বান্ডিল খুলে না-ছড়ালে ছবিটা তত জমত না। তবে অর্থনীতিবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত জিম্মায় ২০-২১ কোটি ফেলনা নয়। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।’’ নারদ কেলেঙ্কারির পরেও অভিযুক্ত পরিচিত ব্যক্তিত্বদের টাকা ‘নেওয়ার’ বিচিত্র ভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ বার রসিকতা, মন্ত্রীমশাই বকেয়া ডিএ বা মুড়ির চড়া দাম দিতে টাকা জমিয়েছেন। মোহনবাগান বলছে, ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএল খেলাতেই এতটা সঞ্চয়। ইস্টবেঙ্গলের জবাব, মোহনবাগানের নাম থেকে ‘এটিকে’ মোছার খরচ তুলছিলেন মন্ত্রী।
পরশুরামের পরশপাথরের পরেশবাবু যা সোনা উৎপাদন করেছিলেন, তাতে বিশ্ববাজারে ‘গোল্ড রিজ়ার্ভ’-এর মূল্য জলের দরে নেমে আসে। আমেরিকা, ব্রিটেন প্রমাদ গুনছিল। ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’-এর বিত্তের বহর তার পাশে নস্যি। কিন্তু নেট-ফোড়নের খোঁচা, কোন বিরিঞ্চিবাবার আশীর্বাদে মন্ত্রীর এত প্রতিপত্তি! মেকিরাম আগরওয়ালার মতো টাইম মেশিনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলে পাড়ি দিয়ে লোহা কিনে বা বেচে এত টাকা জমাননি তো!
সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়ের স্মৃতি, ১৯৬৫-৬৬ সালে টালিগঞ্জের এনটি ওয়ানে টাকার বৃষ্টির স্বপ্ন দৃশ্যটির জন্য ১০০০ টাকার নোটের ছবি তুলে কাগজে অসংখ্য কপি করা হয়। নায়ক উত্তমকুমার সেই ‘টাকা’র চোরাবালিতে তলিয়ে গিয়েছিলেন। মিম বলছে, ‘‘তোমার যা গিয়েছে তা জনগণের থেকে লুটেছ। যা জনগণের ছিল, তা ইডি-র হয়েছে। পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম। পার্থ তুমি কিছুই হারাওনি।’’ রসিক বাঙালিও গীতার দর্শনে স্থিত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy