আদালত জানিয়েছে, পুজোর মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা। ফাইল ছবি
প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালেও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির সামনে, বসার জায়গায় ত্রিপল পাতছিলেন ২০১৪ সালে টেট পাশ করা প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। ধর্না-অবস্থানের কত দিন হল, ব্যানারে তা লিখছিলেন তাঁদেরই এক জন। এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘পঞ্চমীর সকাল। পাড়ার মণ্ডপে আজই পুজোর উদ্বোধন। কিন্তু কোনও কিছুতেই অংশ নিতে পারছি না। সেই ইচ্ছেও নেই। যদি এখন আন্দোলন বন্ধ করে দিই, বাড়ি গিয়ে কী বলব? দাবি মিটল না, আন্দোলন থেমে গেল? তা হবে না।’’
প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী সুতপা লাই এসেছেন হুগলির শেওড়াফুলি থেকে। রোজ ট্রেনে চেপে ধর্নামঞ্চে চলে আসেন তিনি। সুতপা বললেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলন বন্ধ রেখে বাড়িতে গিয়ে পুজো কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর আবেদন আমরা মানব না।’’ সুতপার বাড়িতে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি রয়েছেন। পুজোর দিনগুলিতেও ট্রেনে চড়ে ধর্নামঞ্চে আসবেন তিনি। সুতপার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুজো উদ্বোধন করছেন। সবাই কত আনন্দ করছে। আমাদের কোনও পুজো নেই। এই পুজোতেও তো কিছুই পেলাম না।’’
এ দিন নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু সেই নিয়োগে তাঁরা অংশ নিতে চান না বলে জানিয়েছেন টেটের চাকরিপ্রার্থীরা। ধর্না-অবস্থানে রোজ শামিল হতে কোচবিহারের সইদুল ইসলাম কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে হাওড়ার দাশনগরে বাড়ি ভাড়া করে আছেন। সইদুল বলেন, ‘‘আমরা ২০১৪ সালের টেট পাশ করা প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী। আমাদের ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ঘোষণা করেছিলেন, ১৬৫০০ পদে নিয়োগের পরে আমাদের দফায় দফায় নিয়োগ করা হবে। এখনও সেই ১৬৫০০ পদেই নিয়োগ হয়নি। আমরা কেন ফের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেব?’’ আর এক চাকরিপ্রার্থী মহম্মদ শামিম আখতার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আন্দোলনকারীদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। ২০১৪ সালে টেট-এ বসার সময়ে তাঁদের বয়স চল্লিশের নীচে ছিল। আন্দোলন করতে করতেই তাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গেল।’’
প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের কাছেই বসে ছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। এ দিনই আদালত নির্দেশ দিয়েছে, পুজোর পরেই উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের দাবি, গেজেটের তথ্য অনুযায়ী নিয়োগযোগ্য শূন্যপদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেই দাবি পূরণ না হলে তাঁরা পুজোর মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এ দিনই আদালত জানিয়েছে, পুজোর মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ধর্নামঞ্চেই ইদ, সরস্বতী পুজো-সহ সমস্ত পার্বণ কেটেছে। দুর্গাপুজোও কাটবে। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে নবম থেকে দ্বাদশের আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেড় বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে বসে ছিলেন অনুরাধা সাহা। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে। অনুরাধা বললেন, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি। স্বামী কাজে চলে যান। দেখার কেউ নেই বলে বাচ্চাকে নিয়ে আসতে হয়।’’ অনুরাধা-সহ চাকরিপ্রার্থীদের সকলেরই দাবি, সরকারই নিয়োগ করতে পারত। কিন্তু তা না করে তারা আদালতের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলল, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদালত নিক। চাকরিপ্রার্থী বিল্ব ঘোষ বলেন, ‘‘নিয়োগের বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সরকার আদালতে যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তাতে আমাদের চাকরির কথা কিছু বলেনি। বরং যাঁদের বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের চাকরিতে রেখে দিতেই বেশি আগ্রহী।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy