—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কখনও পুজোর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মণ্ডপ চত্বরে ফুচকা বিক্রেতাকে হেনস্থার ভিডিয়ো ভাইরাল হচ্ছে, কখনও হুইলচেয়ারে বসা মেয়েকে নিয়ে প্রতিমা দর্শনে গিয়ে পুজোকর্তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলে এক মায়ের বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। আবার আগাম টিকিট না কাটলে প্রতিমা দর্শন করতে না দেওয়ারও অভিযোগ সামনে এসেছে কয়েকটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। মণ্ডপের গেটে সমস্যায় পড়ার সেই ভিডিয়ো দিয়ে অনেকেই সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বার বার পুজোয় ভিআইপি পাস বন্ধ করার কথা বলেন, সেখানে কী ভাবে পুজো দেখার টিকিটের নামে পাস বিক্রি হয়?’
আর জি কর-কাণ্ডের আবহে শহরের দুর্গাপুজোর এমনই নানা ঘটনা সামনে আসছে। সচেতন নাগরিক থেকে মনোরোগ চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘অনিয়ম দেখলেই প্রতিবাদের একটা ধারা দেখা যাচ্ছে।’’ মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমন বহু ঘটনাই প্রতি বার ঘটে। বড়জোর মোবাইলে তুলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে দেখা যায়। কিন্তু এ বার প্রতিবাদ হচ্ছে। আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সব মেনে না নেওয়ার পথ নিয়েছেন মানুষ। প্রশ্ন হল, প্রতিবাদ তো এমনিই হওয়ার কথা! খুন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার পরে কেন এই বোধ জাগবে? আরও বড় প্রশ্ন, এই প্রতিবাদী সত্তা কত দিন থাকবে? যেন এই সত্তাকে মরতে না দিই।’’
ফুচকা বিক্রেতার ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়াহাটের সিংহী পার্ক সর্বজনীন পুজো চত্বরে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সেখানে এক ফুচকা বিক্রেতার সমস্ত কিছু রাস্তায় ফেলে দেওয়ায় কয়েক জন পুজোকর্তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এক প্রতিবাদী মহিলার উদ্দেশে কটূক্তি করতেও শোনা যায় এক পুজোকর্তার তরফে। মুহূর্তের মধ্যে ওই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার পরেই সামনে আসে দিনকয়েক আগে করা ওই পুজো কমিটির একটি পোস্ট। তাতে লেখা, ‘রুটিরুজির উৎস দুর্গাপুজো’। সঙ্গে লেখা, উৎসব না করলেও দুর্গাপুজোয় যোগ দিন। কারণ, দুর্গাপুজোর সঙ্গে বহু মানুষের রুটিরুজি জড়িয়ে। এর সঙ্গে ফুচকা বিক্রেতাকে হেনস্থার ছবি যুক্ত করে অনেকেই লেখেন, ‘এই লোকটিও তো রুটিরুজির টানেই এসেছিলেন!’ এর পরেই ক্ষমা চেয়ে বার্তা দিতে হয় পুজো কমিটিকে। কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানানো হয় তাদের সমাজমাধ্যমের পেজে। যদিও কী পদক্ষেপ, তা জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে কমিটির কোনও সদস্যই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।
হুইলচেয়ারে বসা কিশোরীর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে চেতলা অগ্রণী ক্লাবে। কিশোরীর মা মৌমিতা ঘোষ বিষয়টি জানিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখেন। তাঁর অভিযোগ, হুইলচেয়ারে বসা কিশোরীর সঙ্গে এক জনকেই যেতে দেওয়া যাবে বলে জানান পুজো কমিটির কর্তারা। বাকিদের অন্য পথে যেতে বলা হয়। এক জনের পক্ষে হুইলচেয়ার সামলে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভিড়ে চলা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। মৌমিতার আরও অভিযোগ, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কেউ রয়েছেন দেখিয়ে আসলে সুযোগ নেন আপনারা।’’ এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে নানা মহলে। চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘এক জনকে সঙ্গে যেতে বলা হয়েছে। এতে অন্যায়ের কী!’’ ‘অটিজ়ম সোসাইটি’, ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রধান ইন্দ্রাণী বসু বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো বা কোনও উৎসবই কেউ একা উপভোগ করেন না। শুধুমাত্র এই কারণেই তো হুইলচেয়ারে থাকা মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেই মণ্ডপে প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা।’’ বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার প্রধান তথা রিহ্যাবিলিটেশন সাইকোলজিস্ট অমৃতা পান্ডা বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কাউকে দেখিয়ে সুযোগ নেওয়ার কথা নিম্নরুচির পরিচয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কারও সঙ্গে কী ব্যবহার করতে হয়, তার নিয়ম রয়েছে।’’
টিকিট কেটে প্রতিমা দর্শনের বিতর্কে নাম জড়ানো পুজোর মধ্যে অন্যতম উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যয়। জানা গিয়েছে, ইউনেস্কোর স্বীকৃতিকে সামনে রেখে একটি অনুষ্ঠানের ঘোষণা করা হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে। সেই অনুষ্ঠানের টিকিটই বিক্রি হয়েছে নানা মাধ্যমে। ওই ক’দিনের টিকিট যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই মণ্ডপ চত্বরে প্রবেশের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। টালা প্রত্যয়ের পুজোকর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু যদিও বলেছেন, ‘‘যা ভিড় হচ্ছে, তাতে ভিড়ের কে কী বলছেন, ভাবার সময় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy