অমিত ঘোষ।
রেললাইনের ধারে এক ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার জয়নগর ও বহড়ুর মাঝখানে মুকুন্দপুরের বাসিন্দা অমিত ঘোষ (৩৪) নামে ওই ব্যক্তির দেহ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার বারুইপুর জিআরপি থানায় অমিতের বাবা ছেলের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার জন্য অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অমিতের বাবা স্বপন ঘোষ জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি অমিতের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। মাস খানেক ধরে হবু স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ের বাজারও করেছিলেন তিনি। হবু স্ত্রীও নিয়মিত বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে হবু স্ত্রীকে ফোনও করেছিলেন অমিত। তদন্তকারীরা জানান, মৃতদেহ উদ্ধারের তিন দিন পরে যাদবপুরের ঝিল রোড এলাকা থেকে অমিতের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়েছে। রাস্তার ধারে একটি জায়গায় সেটি রাখা ছিল। অমিতের মা ছায়া ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গেই সেই রাতে খাবার খেয়েছিল অমিত। তার পরে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঘরের দরজায় ধাক্কা দেওয়া হয়। দরজা খুলে যায়। দেখি, ছেলে নেই। বাড়ির সদর দরজা খোলা। নেই ওর মোটরসাইকেলও। অমিতের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু বন্ধ ছিল।’’ স্বপনবাবু জানান, সে দিন সন্ধ্যায় বারুইপুর জিআরপি থেকে ফোন আসে। আমাদের থানায় আসতে বলা হয়। তাঁরা থানায় গিয়েই ছেলের দেহ শনাক্ত করেন। তদন্তকারীরা জানান, মুকুন্দপুরে অমিতদের অতিথি নিবাস ও রেস্তরাঁর ব্যবসা রয়েছে। অমিতই একমাত্র সন্তান।
রেলপুলিশ ও অমিতের পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই রাতে ২.৩৮ নাগাদ সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে কোনও সময়েই সিসি ক্যামেরা বন্ধ করা হয় না। ওই রাতের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দেড়টা নাগাদ নিজের ঘরে অমিত অস্থির ভাবে পায়চারি করছে। ওর মোবাইলে একের পর এক ফোন আসছে। অমিতকে খুব উত্তেজিত ভাবে কথা বলত দেখা গিয়েছে। ফোন কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে পড়ছে অমিত। তার পরে কান্নাকাটিও করতে দেখা যাচ্ছে। এর পরেই সিসি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়।’’ পুলিশ জানায়, আপ ও ডাউন লাইনের মাঝখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। অমিতের মাথা গুরুতর চোট রয়েছে। মোটরসাইকেলের চাবি অমিতের পকেটেই ছিল। পেটের ভিতরে কিছুটা ঢুকে গিয়েছিল চাবিটা। তবে ওঁর মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের অনুমান, তিনি ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
ভোরবেলা মোটরসাইকেল রাস্তায় রেখে ট্রেনে চেপে কোথায় যাচ্ছিলেন তিনি, জানতে চেষ্টা করছে পুলিশ। রাতে সিসি ক্যামেরা বন্ধই বা করলেন কেন তিনি? অমিতের কাছে কেউ এসেছিলেন কি? তদন্তকারীদের বক্তব্য, মোবাইল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই রাতে অমিতের মোবাইলে কার ফোন এসেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের অনুমান, অমিতের সঙ্গে অন্য কোনও মহিলার ঘনিষ্ঠতা ছিল। বিয়ের আগে ওই মহিলা কোনও ভাবে অমিতের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছিলেন। অমিতের হবু স্ত্রী বলেন, ‘‘৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ফোন করে অমিত বলেছিল, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। ভিডিয়ো কল করতে বলেছিল। আমি ফোনও করেছিলাম। কিন্তু তখন আর ধরেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy