আশঙ্কা: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বিমানবন্দরের আশপাশে উড়েছে বহু ফানুস। নিজস্ব চিত্র
‘ইটস ডেঞ্জারাস। ইট ক্যান ফ্লেম আউট দি ইঞ্জিন’— পাইলটের চিৎকার শুনে নড়েচড়ে বসেন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর অফিসারেরা।
কী এমন ভয়ানক জিনিস, যার থেকে আগুন ধরে যেতে পারে বিমানের ইঞ্জিনে? কাকে ‘ভয়ানক’ বলছেন কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক উড়ে যাওয়া বিমানের পাইলট? শনিবার সন্ধ্যায় শহরের আকাশ তখন বেশ পরিষ্কার। তবে কী দেখে আচমকা চিৎকার শুরু করলেন তিনি? সেই পাইলটই সঙ্গে সঙ্গে এটিসি-কে বলেন, ‘‘আরে বিমানের কাছে তো ফানুস উড়ে বেড়াচ্ছে। ইঞ্জিনের ভিতরে ঢুকে গেলে কেলেঙ্কারি হবে।’’
শুধু সেই পাইলট একা নন, শনিবার বিকেলের পর থেকে রাত পর্যন্ত এ ভাবে কলকাতা থেকে নামা-ওঠার সময়ে বিমানের কাছাকাছি ফানুস দেখে এটিসি-র কাছে অভিযোগ জানান জনা আটেক পাইলট। এই সময়ে বিরাটির দিক থেকে প্রধান রানওয়েতে নামছিল বিমান। রাতের দিকে একটি ফানুস উড়ে এসে রানওয়ের কাছে ট্যাক্সিওয়েতে পড়েছে, এমনটাও বিমানবন্দরের এক অফিসার দেখেছেন। বেশ কিছু ফানুস বিমানবন্দরের উপরেও চলে এসেছে।
শনিবার পাইলটদের অভিযোগ পেয়ে এটিসি-র তরফে জানানো হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিরাটি, বিটি কলেজের দিকে মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে ফানুস উড়ছে বলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। সেখান দিয়েই বিমানগুলি নামছিল।
জানা গিয়েছে, বাজারে যে ফানুস বিক্রি হচ্ছে, তার প্রতিটির প্যাকেটে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, কোনও বিমানবন্দরের ৫ মাইল (প্রায় ৮ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের মধ্যে ওই ফানুস ওড়ানো যাবে না। কিন্তু কতজন ফানুস ওড়ানোর আগে ওই নির্দেশিকা পড়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিমানবন্দরের অফিসারদের।
আবার ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ ধরলে তার মধ্যে বাগুইআটি, কেষ্টপুর, লেকটাউন, বিরাটি, গঙ্গানগর, সল্টলেক, রাজারহাট-সহ এক বিশাল এলাকা ঢুকে পড়বে। আদালত সমর্থিত সরকারি নির্দেশের পরেও যাঁরা অবলীলায় শব্দবাজি ফাটান, তাঁদের এবং এই বিশাল এলাকার মানুষদের ফানুস ওড়ানোর ক্ষেত্রে কী করে বিরত করা যাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্যাকেটের গায়ে লেখা নিষেধাজ্ঞা
কলকাতা বিমানবন্দরে সমস্ত বিমানসংস্থাগুলিকে নিয়ে গঠিত ‘এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটি’-র চেয়ারম্যান, ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্তের কথায়, ‘‘ফানুসের প্যাকেটের গায়ে যে নির্দেশিকা রয়েছে, তা মানুষের মানা উচিত। কারণ, এর সঙ্গে বিমান ও যাত্রীদের নিরাপত্তা জড়িত।’’ বিষয়টি খুব হাল্কা ভাবে নিয়ে পাত্তা না দিলে কোনও এক দিন একটি ফানুসের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন পাইলটদের একাংশ।
সিনিয়র প্রশিক্ষক পাইলট জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ফানুসের কাগজ, কর্পূর নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু লোহার তারও থাকে। ইঞ্জিনের ভিতরে সেটি ঢুকে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইঞ্জিন। আর বিমান নামা-ওঠার সময়ে আচমকা একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে নানা ধরনের বিপদ হতে পারে।’’
পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, রানওয়েতে নামা-ওঠার সময়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয় তাঁদের। শনিবার এটিসি-তে অভিযোগ জানানোর সময়ে এক পাইলট জানিয়েছেন, এ ভাবে বিমানের কাছাকাছি উড়ন্ত আলোর বিন্দুর ফলে তাঁর মনঃসংযোগে অসুবিধা হচ্ছে। সেই কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছাড়া টেক-অফের পরপরই ফানুস ঢুকে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে, পুরো ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে বিমানকে নামিয়ে আনতে হবে। একই ভাবে নামার সময়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে আকাশে উড়ে গিয়ে সেই একই ভাবে নামতে হবে বিমানকে।
অন্য মতও রয়েছে। এক সিনিয়র পাইলটের কথায়, ‘‘বড় ও শক্ত কিছু ইঞ্জিনে ঢুকলে, তবেই সমস্যা হওয়ার কথা। একটা-দুটো ফানুস উড়ে এলে ততটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তবে বিমান নামা-ওঠার পথে একসঙ্গে শয়ে শয়ে ফানুস উড়লে তখন সমস্যা হওয়ার কথা।’’
কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-র জিএম বরুণকুমার সরকার বলেন, ‘‘সাধারণের মধ্যে ফানুস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নয়তো আগামী দিনে বিপদ বাড়তে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy