Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sinthi Police Station

Sinthi Police Station: প্রতারিতকেই কোর্ট থেকে তদন্তের নির্দেশ আনতে বলছে থানা!

গত ফেব্রুয়ারিতে ওই পেজে সরাসরি সম্প্রচার দেখে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে শালিনী সমাধিয়া নামে এক মহিলা যোগাযোগ করেন।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ০৮:২২
Share: Save:

থানায় গিয়ে পুলিশকে জানানোর পরে কেটে গিয়েছে ১৭ দিন। পুলিশের কথা মতো লিখিত অভিযোগও জমা করা হয়েছে ১৪ দিন আগে। কিন্তু এত দিনেও সিঁথি থানার পুলিশ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার একটি আর্থিক প্রতারণার তদন্ত শুরুই করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, রুজু করা হয়নি এফআইআর-ও। অভিযোগকারিণীর দাবি, তাড়া থাকলে আদালতে যেতে বলা হয়েছে। আদালত বললে এফআইআর করা হবে। প্রশ্ন উঠেছে, সুরাহা পেতে আদালতের দ্বারস্থ কেন হতে হবে? এখন বিষয়টি পৌঁছেছে লালবাজারের বড় কর্তাদের কাছে।

জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিণীর নাম রিয়া গের। সিঁথি থানা এলাকার দক্ষিণ সিঁথি রোড, বর্তমানে যা গণপতি শূর সরণি নামে পরিচিত, সেখানকার বাসিন্দা রিয়ার স্বামী বলরাম গেরের একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। লকডাউনে স্বামী-স্ত্রী অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। সমাজমাধ্যমে তৈরি একটি ‘পেজে’ সরাসরি শাড়ি দেখান রিয়া। সম্প্রচার চলাকালীন তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করে খুচরো বা একসঙ্গে বেশ কিছু শাড়ির বরাত দেওয়া যায়। টাকা পাঠাতে হয় অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপটি যুক্ত রয়েছে ওই দম্পতির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। ক্রেতা টাকা পাঠিয়ে ‘স্ক্রিনশট’ তুলে হোয়াটসঅ্যাপে দিলেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় তাঁরা শাড়ি পাঠিয়ে দেন তাঁরা। হোয়াটসঅ্যাপ দেখা ও বরাত মিলিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শাড়ি পাঠানোর জন্য আলাদা লোক আছেন।

গের দম্পতি জানাচ্ছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ওই পেজে সরাসরি সম্প্রচার দেখে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে শালিনী সমাধিয়া নামে এক মহিলা যোগাযোগ করেন। প্রথমে কয়েকটি শাড়ির বরাত দেন তিনি। দাম বাবদ ৯০০ টাকা পাঠিয়েছেন বলে একটি স্ক্রিনশট পাঠান হোয়াটসঅ্যাপে। সেই মতো শাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওই মহিলার ঠিকানায়। এর পরে কয়েক দফায় ওই মহিলা আরও কিছু শাড়ি এবং পোশাকের বরাত দেন। প্রতি বারই তিনি টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশট পাঠান। যা দেখে শাড়ি পাঠাতে থাকেন অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে রিয়াদের সংস্থার কর্মী। দম্পতির অভিযোগ, গত মে মাসে ব্যাঙ্কের তথ্য খতিয়ে দেখে জানা যায়, শাড়ি ও মহিলাদের অন্যান্য পোশাক মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার জিনিস ওই মহিলা নিলেও পাওনা টাকা দেননি। টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশটগুলিও ভুয়ো।

অভিযোগকারিণীর স্বামী বলরাম বলেন, ‘‘অনলাইন ব্যবসায় আমরা নতুন। প্রতিদিন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখি না। ওই মহিলা প্রতি বার স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন। আমাদের কর্মীও বিশ্বাস করে জিনিস পাঠিয়ে গিয়েছেন। গত ২৭ মে জানা যায়, আমাদের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকাই পড়েনি। অথচ, পাঁচ লক্ষ টাকার মতো জিনিস নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তখন মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, শুধু টাকার অঙ্ক বদলে প্রথমে পাঠানো স্ক্রিনশটটাই বার বার দেওয়া হয়েছে।’’

ওই দম্পতি তাঁদের কর্মী অনুরাধাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেননি। রিয়ারা তাঁর ফোন দেখতে চাইলে তিনি এ-ও জানান, ক’দিন আগে সব বার্তা মুছে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ওইমহিলাকে ফোন করা হলে তিনি তা কেটে দেন এবং দম্পতির সব নম্বর ব্লক করে দেন বলেও দাবি। বলরামের অভিযোগ, ‘‘থানায় গেলেও সমানে ঘোরানো হয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিসি-কে (নর্থ) এবং লালবাজারে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছি। তা দেখে বলা হয়েছে, ডিসি-র কাছে যখন গিয়েছে, তখন থানার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তার পরেও কিছু দিন ঘোরানোর পরে বলা হয়েছে, আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ১৫৬ (৩) ধারায় নির্দেশ নিয়ে আসুন।’’

এ বিষয়ে আইনজীবীদের অনেকেরই মত, থানা থাকতে কাউকে আদালতে গিয়ে কেন সুরাহা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে? এই ঘটনা পুলিশের কর্তব্যে গাফিলতির উদাহরণ। আইনজীবী শুভঙ্কর মান্নার প্রশ্ন, ‘‘যিনি প্রতারিত হয়েছেন, তাঁকেই আইনজীবী ধরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ আনতে হবে? আর এ সবের খরচ কে দেবে?’’

লালবাজারের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা সব শুনে বলেছেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ করে দেখতে বলছি। সাইবার থানা না হলেও লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখা বিষয়টি দেখে নেবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Sinthi Police Station Money embezzlement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy