প্রতীকী ছবি।
নেশাসক্তদের মূল স্রোতে ফেরাতে কলকাতা পুলিশের তরফে চালু করা হয়েছিল ‘শুদ্ধি’ প্রকল্প। অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে সেই প্রকল্পে নতুন নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে না। এমনকি শুদ্ধির ওয়েবসাইটও ঠিকমতো আপডেট না করার অভিযোগও উঠেছে। যার জেরে সমস্যায় পড়েছেন শহরের নেশাসক্তদের পরিবারের লোকজনও।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শহরতলির তিনটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কলকাতা পুলিশ ওই প্রকল্প চালু করেছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত শুদ্ধির আওতায় প্রায় ১৫০ জন নেশাসক্তের চিকিৎসা হয়েছে। তিনটি নেশামুক্তি কেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন রোগী রয়েছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আর কোনও নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে না।
লালবাজার সূত্রের খবর, আর্থিক সমস্যার জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে তিনটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে নতুন নাম পাঠানো যায়নি। ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন লালবাজারের কর্তারাও। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘শুদ্ধি প্রকল্পের টাকা যে সরকারি খাত থেকে আসে, সেখানে টাকা নেই। তাই এই সমস্যা। যে কারণে নতুন সদস্যের নাম নথিভুক্ত করা যাচ্ছে না।’’ তবে এই প্রকল্প যাতে দ্রুত চালু করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত চেষ্টা চলছে বলে জানান গোয়েন্দাপ্রধান।
নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলির মতে, নেশাসক্তেরা অনেক সময়েই নেশা করার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার জেরে তাঁদের পরিবারের লোকজনও সমস্যার মুখে পড়েন। সেই ভয় থেকেই অনেক নেশাসক্তের পরিবারের লোকজনই চাইছেন, দ্রুত ওই প্রকল্পের আওতায় তাঁদের বাড়ির লোককে যুক্ত করতে। যাতে সেই সদস্যের নেশামুক্তির সুযোগ মেলে।
বৌবাজার থানা এলাকার ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন এক বৃদ্ধ। ফুটপাতেই তাঁর সংসার। তাঁর তিরিশ বছরের ছেলে গত এক বছর ধরে মদ্যপানে আসক্ত। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘ছেলের জন্য পুলিশের ওই প্রকল্পের খোঁজ করতে মাস খানেক আগে বৌবাজার থানায় যোগাযোগ করি। কিন্তু থানা আমাকে জানিয়েছে এখন ওই প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। আমরা গরিব। শুদ্ধির মাধ্যমে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারলে সুবিধে হয়। ছেলে একই অবস্থায় রয়েছে।’’
মানিকতলা, নারকেলডাঙা, এন্টালি, মেটিয়াবুরুজ থানার মতো বিভিন্ন এলাকায় ওই সমস্যা চলছে। গত তিন মাস ধরে প্রায় দশ জন নেশাসক্ত সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেও ‘শুদ্ধি’ প্রকল্পে নাম লেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। সমস্যায় পড়েছে বিভিন্ন থানার পুলিশও। মানিকতলা থানার এক সাব ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘‘গত বছরের জানুয়ারি থেকে ‘শুদ্ধি’ প্রকল্প চালু হওয়ায় বেশ সাড়া মিলেছিল। মাদক, মদের নেশা যাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপন অসম্ভব করে তুলেছিল, এখন তাঁরাই জীবনের মূল স্রোতে ফিরছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে এখন নতুন নাম নথিভুক্তের কাজ বন্ধ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।’’
বৌবাজার থানার এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্পের প্রচারে ভাল সাড়া মেলেনি। নেশাসক্তদের চিকিৎসার জন্য তাঁদের পরিবার আমাদের কাছে বারবার এলেও কিছু করা যাচ্ছে না।’’ শুদ্ধি-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তিনটি বেসরকারি সংস্থার একটির কর্ণধার পরীক্ষিৎ ধর বলেন, ‘‘এখন আমাদের হোমে যে ২০ জন রোগী রয়েছেন, তাঁরা সেপ্টেম্বরের আগে ভর্তি হয়েছেন। শেষ তিন মাস কলকাতা পুলিশ নতুন কাউকে পাঠায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy