ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেরিব্রাল স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয়েছে শর্বরীর। —ফাইল চিত্র
মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার তাঁর দেহের ময়নাতদন্তের পর পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে তেমনই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা আধিকারিকদের দাবি, ময়নাতদন্তের পর অটোপসি সার্জনরা খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬৩ বছরের শর্বরীর মৃত্যু হয়েছে বুধবার মধ্যরাতে। চিকিৎসদের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের অন্তত ৩৬ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয় শর্বরীর। শর্বরীর নিঃসাড় দেহ তাঁর বাড়ির একতলার শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয় বৃহস্পতিবার রাতে। অর্থাৎ, উদ্ধার হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শর্বরীকে শৌচাগারে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুলিশকে শর্বরীর পুত্রবধূ কনকলতা জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন তিনি। হাঁটুর সমস্যার জন্য বাড়ির নীচের তলাতেই থাকতেন শর্বরী। বৃহস্পতিবার উপরতলায় বিশ্বকর্মা পুজো থাকলেও তিনি উপরে যাননি বলে দাবি তাঁর পুত্র অমলিন এবং পুত্রবধূ কনকলতার। শুক্রবার শর্বরীর একটি ফ্যাশন শুটের লোকেশন দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। শুটের আয়োজকরা বৃহস্পতিবার রাতে বার বার ফোন করেও তাঁকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই তাঁর পুত্র এবং পুত্রবধূ শর্বরীর খোঁজ করতে গিয়ে তাঁকে শৌচাগারে পড়ে থাকতে দেখেন। অর্থাৎ, শুটের আয়োজকদের ফোন না এলে শর্বরী ওই অবস্থায় আরও বহুক্ষণ পড়ে থাকতে পারতেন।
আরও পড়ুন: কলকাতার ক্যানভাস বদলে দেওয়া শর্বরী নেই, ভাবতেই পারছে না টলিউড
পুলিশ সূত্রের খবর, শর্বরীর কানের পাশে এবং বাঁ পায়ের গোড়ালির কাছে ক্ষতচিহ্ন ছিল। তা থেকেই প্রশ্ন ওঠে, তাঁর মৃত্যু কতটা স্বাভাবিক, তা নিয়ে। স্থানীয় চিকিৎসক ওই ক্ষতচিহ্ন দেখেই ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চাননি। তখন খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ক্ষতচিহ্নের কারণে দেহের ময়নাতদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। সেই ময়নাতদন্তেরই প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেরিব্রাল স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয়েছে শর্বরীর। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, শৌচাগারে পড়ে গিয়ে শর্বরীর দেহে ওই ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়েছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই তিনি পড়ে যান বলেও ময়নাতদন্তকারীদের বক্তব্য। অনেক সময়েই বয়সের কারণে বৃদ্ধরা দেহের ভারসাম্য রাখতে না পেরে পিচ্ছিল শৌচাগারে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রবীণ ধারাভাষ্যকার কিশোর ভিমানি কয়েকদিন আগে শৌচাগারে পড়ে গিয়ে সঙ্কটজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে প্রবীণ চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে পতন, নাকি পতনের কারণেই মস্তিঙ্কে আঘাত, তা নিয়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে সংশয় থাকে। শর্বরীর দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন। সেই পতনের কারণেই তাঁর দেহে আঘাত লেগেছিল।
আরও পড়ুন: ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু, শৌচাগারে মিলল দেহ
পারিবারিক সূত্রের খবর, পুত্র এবং পুত্রবধূর সঙ্গে সম্পর্ক খুব মধুর ছিল না শর্বরীর। সম্প্রতি তাঁর সারাক্ষণের সঙ্গী ছিলেন প্রাক্তন টিভি অ্যাঙ্কর রেশমি বাগচি। মঙ্গলবারও রেশমির সঙ্গে শর্বরীর দেখা হয়েছিল। এদিন রেশমি বললেন, ‘‘আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ছে। যে দিন ফোনটা ধরেই কাঁদতে কাদতে শর্বরীদি বলেছিলেন, আমায় একটা চাকরি দিতে পারো? আর পারছি না। কাজ না পেলে মেট্রোয় আত্মহত্যা করতে হবে এ বার!’’ রেশমি আরও বলেন, ‘‘একটা সময়ে পারিবারিক কারণে খুবই কষ্ট পেয়েছেন। উনি কাজপাগল মানুষ ছিলেন। বাবা (কবি অজিত দত্ত)-কে কিছু কাজ করতে চাইছিলেন। এতক্ষণে আমাদের কোনও একটা ক্যাফেতে বসার কথা ছিল কাজ নিয়ে! দিদি আর একটু সময় দিতে পারত আমায়।’’ প্রসঙ্গত, রেশমির সঙ্গে বুটিক ‘শূন্য’-তে কাজ করছিলেন শর্বরী। রেশমির কথায়, ‘‘শূন্যতে এসে নিজেকে মেলে ধরছিলেন দিদি।’’ শর্বরীর সেই অভিযোগ অবশ্য তাঁর পরিবারের লোকজন উড়িয়েই দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, শর্বরীর সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল ছিল। তাঁরা সম্প্রতি বীরভূমের আমোদপুরেও গিয়েছিলেন। শর্বরীর এক বান্ধবীর বক্তব্য, ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না। যদিও ছেলে অমলিনের বক্তব্য, তেমনকিছু নয়। মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বরাবরই ভালই থেকেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তিনজন তো শান্তিনিকেতনে ঘুরে এলাম। আমোদপুরে আমাদের একটা সম্পত্তি আছে। সেখানেও গিয়েছিলাম।’’ সেই বাড়ির কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, শর্বরীর সঙ্গে তাঁর ছেলের সম্পর্ক ভাল ছিল বলেই মনে হয়েছে তাঁর। কোনও বচসা বা ঝগড়াঝাটির ঘটনাও চোখে পড়েনি।
তবে শর্বরী এবং অমলিন আলাদা আলাদা ভাবেই কাজ করতেন। দু’জনের ওয়ার্কশপও আলাদা ছিল। অমলিনের কথায়, ‘‘উনি ওঁর মতো কাজ করতেন। আমি আমার মতো কাজ করতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy