প্রতীকী চিত্র।
বৈশাখের প্রবল গরমেও পাখা বন্ধ। অভিযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছেন বাড়ির মালিক। কারণ, তাঁদের কারও এক মাসের ভাড়া বাকি, কারও দু’মাস। বদ্ধ ঘর ছেড়ে সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সরণির ফুটপাতে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসলেও স্বস্তি নেই। পুলিশের গাড়ি লাঠি উঁচিয়ে উঠে যেতে বলে তাঁদের।
টানা লকডাউনে রোজগার বন্ধ। শহরের যৌনকর্মীদের বড় অংশই সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের ঘরের ভাড়া মেটানো নিয়ে। লকডাউনের জেরে তাঁরা বাড়িও ফিরতে পারছেন না। এমনকি, রোজগারের টাকা থেকে ভাড়া মেটানোর অবস্থায় নেই। বহরমপুরের বাড়িতে ফিরতে না-পারা সোনাগাছির এক যৌনকর্মী বলেন, “এত দিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পুলিশ, বিধায়কের দেওয়া খাবারে চলে যাচ্ছিল। কয়েক দিন ধরে সেই সাহায্য কমতে শুরু করেছে। এর পরে কী করব জানি না। খাবার পেলেও হাতে টাকা নেই, ঘর ভাড়া মেটাব কী করে!”
কালীঘাট এলাকায় এমন ঘরের মাসিক ভাড়া কম করে পাঁচ হাজার টাকা। সোনাগাছিতে ঘরের ন্যূনতম মাসিক ভাড়াই প্রায় আট হাজার টাকা। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা বললেন, “কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের ঘরের প্রতি বর্গফুটের দামের হিসেব যদি করা যায়, বহু ক্ষেত্রে সেটা সোনাগাছির থেকে কম! এখানকার গলিগুলিতে কয়েক ধরনের ঘর রয়েছে। ‘এ’ ক্যাটেগরির ২০ ফুট বাই ৩০ ফুটের ঘর আর এক চিলতে বারান্দার ভাড়া মাসে ৬০ হাজার টাকা। রোজগার থাকলে অন্য কথা, কিন্তু এখন এত টাকা কেউ মেটাবেন কী করে?”
আরও পড়ুন: প্রথম পুর প্রশাসকের বৈঠক জুড়ে করোনা
এই ঘর নিয়ে আরও সমস্যার কথা শোনালেন দীর্ঘদিন সোনাগাছিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা রূপা সরকার। তিনি জানান, ভাড়া যা-ই হোক, কোনও ঘরেরই ভাড়ার বদলে ভাড়াটেকে কাগজপত্র দেওয়া হয় না। শুধু মাসিক খাতা চলে। সেই খাতা দেখেই ভাড়া নেন বাড়ির মালিকের ঠিক করা লোক। রূপা বলেন, “ইমমরাল ট্র্যাফিক প্রিভেনশন আইনে কোনও ঘর যৌন ব্যবসার কাজে ভাড়া দেওয়া যায় না। সেটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই কাগজ ছাড়াই ভাড়া চলে।” ঘরের কাগজ না থাকাই এই মুহূর্তে যৌনকর্মীদের বেশি সমস্যায় ফেলেছে বলে জানালেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা। তিনি বলেন, “কাগজ না থাকায় কোনও ঠিকানার নথি নেই। ফলে বহু যৌনকর্মীর রেশন কার্ডই হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সাহায্য না পেলে যে রেশন তুলে খাবেন, সেই সুযোগও নেই। এক সময়ে ঊষা কোঅপারেটিভ করে যৌনকর্মীদের ব্যাঙ্কের বই করিয়েছিলাম আমরা। তাতে ভাড়ায় নেওয়া ঘরের ঠিকানা দিয়েই নির্বাচন কমিশনে বলে ভোটার কার্ড করানো হয়েছিল। সেই সূত্রে কয়েক জনের রেশন কার্ড হলেও সবার হয়নি।”
ওই সমিতি সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে না পারা বিভিন্ন জেলার প্রায় পাঁচ হাজার যৌনকর্মী আটকে রয়েছেন সোনাগাছিতে। এমন প্রায় দু’হাজার জন থাকছেন কালীঘাট এবং বৌবাজারের যৌনপল্লিতে। একই ভাবে খিদিরপুরে রয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি যৌনকর্মী। লকডাউন উঠলেও তাঁদের দ্রুত রোজগারে ফেরার সম্ভাবনা নেই। কারণ, পেশার স্বার্থেই তাঁদের ছোঁয়াচ বাঁচানো এক প্রকার অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন হয়ে রাজ্যের এডস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সোসাইটিতে যে তহবিল আসে, তা-ও এ বার সময় মতো আসবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, “কয়েকটি বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে সাময়িক ভাবে ভাড়ার সমস্যা কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন সামলানো যাবে? বাকিদেরই বা কী হবে?”
আরও পড়ুন: বন্দি শহরে শেয়ালেরও বন্ধু বন্ধ প্রকল্পের কর্মীরা
রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা যদিও বললেন, “কেন রেশন কার্ড হয়নি, সে সব নিয়ে এখন কথা বলা যাবে না। কিন্তু খাবারের কোনও সমস্যা হবে না, এটুকু বলতে পারি। প্রতিদিন যৌনপল্লিগুলিতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সোনাগাছিতে আমি নিজে বিধায়ক হিসেবে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যত দিন লকডাউন চলবে দেওয়া হবে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy