আহত শিবশঙ্কর ভাণ্ডারী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
যানজটে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ি। সে সময়ে লরি থেকে নেমে সামনের বাঁ দিকের চাকা পরীক্ষা করছিলেন চালক। কিছু ক্ষণ পরে এক যুবক এসে তাঁর কাছে খৈনি চায়। চালক উঠে দাঁড়াতেই আচমকা ওই যুবক তাঁর জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা এবং নথি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চালক বাধা দেওয়ায় তাঁর দুই হাতে ক্ষুর দিয়ে আঘাত করা হয় বলেও অভিযোগ। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় ওই ব্যক্তির দু’হাতের ন’টি আঙুল। চারটি আঙুলের কিছু অংশ কেটে ঝুলতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে ওই চালক অভিযুক্ত যুবকের কান কামড়ে দেন। তাতে আঘাত করা থামালেও যুবকটি চালকের টাকা ও লাইসেন্স নিয়ে পালায়।
জখম ওই চালক শিবশঙ্কর ভাণ্ডারীর পরিজনেদের অভিযোগ, কাটা আঙুলে অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁরা শহরের দুই সরকারি হাসপাতালে ঘুরেছিলেন। কিন্তু কোথাও শিবশঙ্করকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। শেষে বাড়ির লোকজন ওই ব্যক্তিকে কসবার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। আজ, সোমবার সেখানেই শিবশঙ্করের আঙুলে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে একবালপুর থানা এলাকার ডায়মন্ড হারবার রোডে। শিবশঙ্করের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলারহাট থানার মন্মথপুরে। তিনি বন্দর এলাকা থেকে গাড়ি নিয়ে খিদিরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। লরিতে একাই ছিলেন তিনি।
লালবাজার জানায়, ঘটনার পরে অন্য চালকেরাই একবালপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ শিবশঙ্করকে উদ্ধার করে প্রথমে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে জখম চালকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানকার প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে জরুরি ভিত্তিতে শিবশঙ্করের দুই ক্ষতবিক্ষত হাতের চিকিৎসা করানো হয়।
শিবশঙ্করের পরিবারের দাবি, কেটে যাওয়া চারটি আঙুলে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় পুলিশ প্রথমে তাঁকে নিয়ে যায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও শিবশঙ্করকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। তার পরে পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে ছোটেন এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
শিবশঙ্করের ভাই সচ্চিদানন্দ ভাণ্ডারীর অভিযোগ, ওই দুই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, রবিবার তাঁদের প্লাস্টিক সার্জারির বহির্বিভাগ বন্ধ থাকে। সেখান থেকে বললে তবেই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়। সচ্চিদানন্দ বলেন, ‘‘চিকিৎসা শুরু না হলে ফের অসুবিধা হতে পারে ভেবে আমরা দাদাকে নিয়ে সোজা কসবার একটি নার্সিংহোমে চলে আসি। সোমবার সেখানেই তাঁর আঙুলে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।’’
পরিবারের অন্য সদস্যেরা জানিয়েছেন, ঢোলারহাট থেকে তাঁদের শহরে আসতে রবিবার সকাল ন’টা বেজে যায়। শনিবার রাতে শিবশঙ্করকে উদ্ধার করার সময় থেকে এ দিন কসবার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন একবালপুর থানার এক অফিসার শিরিং তামাং। তিনিই ওই চালকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন বলে দাবি পরিবারের।
চিকিৎসা নিয়ে এই টালবাহানার মধ্যেই অবশ্য অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম শাহদাত হোসেন ওরফে সাকা। ময়ূরভঞ্জ রোডের ময়লা ডিপোর কাছ থেকে রবিবার তাকে ধরা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্তকে দেখা গেলেও শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। কিন্তু শোনা গিয়েছিল, তার কান কামড়ে দিয়েছে এক জন। কে কানে আঘাত পেয়েছে, সেই খোঁজ করতে গিয়েই সাকার সন্ধান মেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy