Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Seventy six pages suicide note

মিলল ৬৭ পাতার চিঠি, গোটা শ্বশুরবাড়িকে খুন করতে চেয়েছিলেন অমিত!

অমিতের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬৭ পাতার চিঠি। তাতে ছত্রে ছত্রে রয়েছে স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির প্রতি প্রবল ক্ষোভ এবং হতাশার কথা।

ফুলবাগানে খুনের তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

ফুলবাগানে খুনের তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ২১:১৮
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরেই চলছিল টানাপড়েন। স্ত্রী তো বটেই, গোটা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গেই। তার প্রভাব পড়েছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অমিত আগরওয়ালের কর্মজীবনেও। স্ত্রী-শাশুড়িকে খুন করে অমিতের আত্মহত্যার ওই ঘটনায় তদন্তকারী অফিসাররা মনে করছেন, স্ত্রী শিল্পীর বাবা-মা-ভাই অর্থাৎ ফুলবাগানের ঢনঢনিয়া পরিবারের সবাইকেই খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন বছর ৪২-এর অমিত।

অমিতের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬৭ পাতার চিঠি। তাতে ছত্রে ছত্রে রয়েছে স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির প্রতি প্রবল ক্ষোভ এবং হতাশার কথা। তদন্তকারীদের ধারণা, সোমবার শ্বশুর এবং শ্যালককেও খুনের পরিকল্পনা ছিল অমিতের। শ্যালক থাকেন নয়ডায়। ফোন করে ওই দিন কলকাতায় থাকতে বলেছিলেন অমিত। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক তিনি আসেননি।

অমিত যে পিস্তল দিয়ে শাশুড়িকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন, তার ম্যাগাজিন ভর্তি গুলি লোড করে এসেছিলেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তা থেকেই মনে করা হচ্ছে, একাধিক খুনের পরিকল্পনা নিয়েই শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি ল্যাপটপও।

আরও পড়ুন: মোদীবাবু পেট্রল বেকাবু: কেন্দ্রকে দলবদ্ধ আক্রমণ তৃণমূলের

বেঙ্গালুরুতে গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে একটি হোটেলে উঠেছিলেন অমিত। রবিবার ছেলেকে সেখানে রেখে স্ত্রীর ফ্ল্যাটে যান। ধস্তাধস্তির চিহ্ন মিলেছে স্ত্রীর শরীরে। শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করার পর ফিরে আসেন হোটেলে। ছেলেটি মায়ের কথা জানাতে চাইলে এড়িয়ে যান অমিত।

বিমানে কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে এক পরিচিতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছেলেকে। ওই পরিচিতই অমিতের দাদার বাড়িতে পৌঁছে দেন ছেলেকে। সেখান থেকে অ্যাপ-ক্যাবে করে চলে যান ফুলবাগানে। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বিমানবন্দরে নেমে বিকেল পাঁচটার মধ্যে পৌঁছে যান শ্বশুরবাড়িতে।

আরও পড়ুন: পাক হাইকমিশনের অর্ধেক কর্মীকে ফেরত পাঠাচ্ছে নয়াদিল্লি

বিমানবন্দর থেকে নামার পরই পরই তিনি আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করেছেন এটা ধরেই নেওয়া যায়। কলকাতায় কার কাছ থেকে তিনি পিস্তল পেলেন তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ওই পরিচিতই কি তাকে পিস্তল জোগাড় করে দিয়েছিলেন, নাকি অন্য কেউ— এখনও তা স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীদের দাবি, বিমানবন্দর থেকে ফুলবাগান যাওয়ার পথে দেশি ওই পিস্তল সংগ্রহ করেন অমিত। ওই আগ্নেয়াস্ত্রর বরাত তিনি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন।

যে অ্যাপ-ক্যাবে করে বিমানবন্দর থেকে ফুলবাগান যান অমিত তার চালককেও ইতিমধ্যেই জেরা করা হয়েছে। ক্যাব বুক করার পর, শ্বশুরবাড়ি কোন পথে পৌঁছেছিলেন, তা ওই সংস্থার সার্ভার রেকর্ড থেকে জানার চেষ্টাও হচ্ছে।

পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত আরও কিছু কিছু বিষয় উঠে এসেছে। অমিত আচরণে ‘ডমিনেটিং’ ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। পেশাগত দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন স্ত্রী শিল্পী। ১৪ বছর আগে নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেন। প্রথমে কলকাতায় চাকরি শুরু করেন। তার পর চলে যান হায়দরাবাদ। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ফের বেঙ্গালুরুতে চলে যান ওই দম্পতি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কিছু দিন বেকারও ছিলেন অমিত। সেই সময় দাম্পত্য অশান্তি বাড়ে।

৬৭ পাতার চিঠিতে পড়ে তদন্তকারীদের ধারণা, অমিত রক্ষণশীল মানসিকতার লোক ছিলেন। অন্য দিকে, তাঁর স্ত্রী শিল্পীর জীবনের গতি ছিল অনেক বেশি। তা নিয়েও দু’জনের মনোমালিন্য হত নিয়মিত। সুইসাইড নোটে অমিতের অভিযোগ, তিনি বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। নিজের কেরিয়ার বা পেশাগত ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু স্ত্রী-র বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত এবং প্রদীপ দুই ভাই। তাঁদের মূল বাড়ি উত্তরপাড়ায় হলেও, প্রদীপ থাকেন বেলঘরিয়াতে।

সুইসাইড নোটে অমিত লিখেছেন, তিনি চাইতেন তাঁর ছেলে কলকাতায় তাঁর বাড়িতে বাকি সব আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বড় হোক। কিন্তু শিল্পী তা চাইতেন না। তা নিয়েও দু’জনের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে।

বিবাহিত জীবনে কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় ডিভোর্সের দিকে গড়াচ্ছিল সম্পর্ক। রক্ষণশীল অমিত কি সেটাও মেনে নিতে পারেননি? না কি এর মধ্যে আরও কিছু রয়েছে? পুলিশ এখনও উত্তর খুঁজছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy