কথা: আলোচনাসভায় বরাহনগর মতিলাল মল্লিক লেনের বাসিন্দারা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
‘‘সে দিন তো অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। আবার ওই রকম হবে না তো! টালা সেতু কবে ঠিক হবে কাকু?’’ চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে হঠাৎই প্রশ্ন করা মেয়েটার দিকে নজর ঘুরে গিয়েছিল সকলের। মেয়েটি জানাল, কয়েক দিন আগে তার স্কুলেরই বাস চিৎপুর লকগেটের কাছে বাতিস্তম্ভে সজোরে ধাক্কা মারে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তার কয়েক জন সহপাঠীকে। ওই বাসে থাকার কথা ছিল তারও। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোতে সামান্য দেরি হওয়ায় সে বাসটি ছেড়ে দিয়েছিল সে দিন। কথা শুনে ঘরভর্তি লোকের ফিসফাস, ‘‘ভাগ্যিস বাসটা ছেড়ে দিয়েছিল!’’
‘ভাঙার আগেই টালা সেতু বিপদ বাড়াল কত?’ সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক আলোচনায় এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল বরাহনগর মতিলাল মল্লিক লেনের বাসিন্দাদের সামনে। নানা আশঙ্কার পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দাদের তরফে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে উঠে এসেছে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আকুতি। কেউ বলেছেন, ‘‘সেতু ভাঙার আগেই তো মরে রয়েছি। দ্রুত ব্যাপারটা দেখুক সরকার।’’ কেউ আবার জানিয়েছেন, রোজ অফিস যাওয়ার পথে দুর্ভোগের কথা। নিজেরাই জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থার কথাও। ত্রিদিব বিশ্বাস নামে এক স্থানীয়ের আবার বক্তব্য, ‘‘দেখবেন, আরেকটা মাঝেরহাটের অঘটন যেন না হয়। আমরা মৃত্যু চাই না।’’
পুজোর আগেই টালা সেতুর ভগ্ন স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে সেখান দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ঘুরিয়ে দেওয়া হয় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা সবক’টি বাসের রুট। এখন ছোট গাড়ি চললেও কয়েক দিনের মধ্যেই তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে জেনে সমীর চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘সব থেকে সমস্যায় পড়ছি হাসপাতালে যেতে। ছোট গাড়িও বন্ধ হয়ে গেলে জরুরি সময়ে আর জি কর পর্যন্ত তাড়াতাড়ি যাব কী করে?’’
প্রাক্তন প্রতিরক্ষা কর্মী মানস পারেখ আবার জানান, টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পরে বিকল্প অটো রুট বা লঞ্চ চালানোর ব্যবস্থা হলেও তাঁদের এলাকা থেকে কাছের কুঠিঘাট পর্যন্ত যাওয়ার তেমন বন্দোবস্ত নেই। টালা সেতুর জেরে হঠাৎই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যান পরিষেবাও তেমন কোনও নেই। মলয় চক্রবর্তী নামে আরেক বাসিন্দার দাবি, ‘‘আমি প্রতিদিনের ভুক্তভোগী। চিড়িয়ামোড় দিয়ে দমদম স্টেশন পর্যন্ত যেতে প্রায়ই বাস থেকে নেমে হাঁটতে হয়। বরাহনগর থেকে কলকাতা যেতে যে এখনও আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে, তার কী হবে?’’
বিকল্প প্রস্তাব দিতে গিয়ে দীপেন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি জানান, বেইলি ব্রিজের মতো কোনও সেতু তৈরির কথা ভাবা যেতে পারে। আইআইটি-র আধিকারিকদের ডেকে টালা সেতু দেখানোর পাশাপাশি প্রতি ছ’মাস অন্তর শহরের সকল সেতুরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো দরকার। সেই সঙ্গে কাশীপুরের রাস্তা এবং লকগেটের ব্যবহার আরও বাড়ানোরও পরামর্শ দেন অনেকে। তবে এ ক্ষেত্রেও লকগেটের স্বাস্থ্য একটি বড় সমস্যার বিষয়। প্রশ্ন ওঠে, ভুক্তভোগীরাও কি নিজেরা কোনও সুরাহা বার করার কথা ভাবছেন? সেতুর ভার কমাতে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে একটি গাড়িতেই পাড়ার কয়েক জন যাতায়াত করতে পারেন। অমলেশ ভট্টাচার্য নামে এক জন বলেন, ‘‘ভাবা যেতেই পারে। তবে টালা সেতু থাকবে না ভেবেই বিভীষিকা লাগছে।’’
আলোচনায় ওঠে রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গও। অনেকেই দাবি করেন, সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে দ্রুত সেতু নির্মাণে জোর দেওয়া উচিত। তবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বর্তমান সম্পর্কের সমীকরণে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে সেই প্রশ্নও রয়েছে। শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দাদার সঙ্গে দিদির কী সমস্যা রয়েছে তা তো আমাদের দেখার কথা নয়!’’
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পেরোলেও শহরের তাপমাত্রা সে ভাবে নামেনি। জমজমাট তর্ক-বিতর্কে সভাস্থলের উত্তাপ যেন তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy