বছর তিনেক আগে মিলেনিয়াম পার্ক লাগোয়া শিপিং জেটিঘাট থেকে লঞ্চে উঠতে গিয়ে গঙ্গায় পড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছিল রিষড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধের। সেই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম লিমিটেডের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন মৃতের স্ত্রী ও ছেলে। গত ২১ জানুয়ারি ওই আদালত নিগমের অপ্রতুল পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মৃতের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
তবে ওই দুর্ঘটনার পরে তিন বছর কেটে গেলেও সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেল, নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।
২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় রিষড়ার বাসিন্দা ঘনশ্যাম দাগা শিপিং জেটিঘাট থেকে হাওড়া যাওয়ার টিকিট কাটেন। তাঁর ছেলে ওম দাগার অভিযোগ, ‘‘স্থায়ী জেটি থেকে অস্থায়ী জেটিতে উঠতে
গিয়েই মাঝের ফাঁক দিয়ে বাবা গঙ্গায় পড়ে যান। বাবাকে উদ্ধারের জন্য ভূতল পরিবহণ নিগম কোনও চেষ্টাই করেনি। ওই সময়ে জেটিতে পর্যাপ্ত আলোও ছিল না।’’ ওমের আরও অভিযোগ, ‘‘বাবাকে উদ্ধারের জন্য ডুবুরিও নামানো হয়নি। ১৬
তারিখ হাওড়ার তেলকল ঘাট থেকে বাবার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়।’’ গত ২১ জানুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে ভূতল পরিবহণ
নিগমের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ঘনশ্যামবাবুর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ভূতল পরিবহণ দায় এড়াতে পারে না। ওই জেটিতে সিকিওরিটি গেট, পর্যাপ্ত আলো বা প্রাচীরের ব্যবস্থা— কিছুই ছিল না। দক্ষ ডুবুরিও ছিলেন না। ওই সময়ে ডুবুরি থাকলে হয়তো বৃদ্ধকে উদ্ধার করা সম্ভব হত।’’
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘আদালতের রায় মেনে চলতে আমরা বাধ্য। ২০১৭ সালের ওই ঘটনার পরে আমরা শহরের জেটিগুলির পরিকাঠামো উন্নত করেছি। প্রতিটি ঘাটে ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) মানা হচ্ছে। জলসাথী প্রকল্প চালু করা হয়েছে।’’ পরিবহণসচিব এ কথা বললেও শহরের বিভিন্ন লঞ্চঘাটে অবশ্য উল্টো ছবিটাই দেখা গেল।
নিয়ম অনুযায়ী, লঞ্চ না থাকলে যাত্রীরা যাতে জেটিতে যেতে না পারেন, তার জন্য জেটির প্রবেশপথ বন্ধ রাখার কথা। সেখানে এক জন রক্ষী বা কর্মীকে রাখাটাও নিয়ম। কিন্তু সম্প্রতি এক দুপুরে উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা
লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেল, জেটিতে ঢোকার গেট পুরোপুরি খোলা। আহিরীটোলা লাগোয়া শোভাবাজার লঞ্চঘাটে নিরাপত্তাহীনতার ছবিটা আরও প্রকট। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, টিকিট কাউন্টারে মাত্র এক জন কর্মী। জেটির গেট পুরোপুরি খোলা। কর্মীরাও কেউ নেই। যে খুশি
অবাধে জেটিতে ঢুকে পড়ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেটির গেট সারা রাত খোলা থাকায় ভিতরে সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসে।
জলসাথী প্রকল্পের কর্মীদের দেখা পাওয়াও দুষ্কর বলে অভিযোগ। বরাহনগরের কুঠিঘাটে এক জন ও শিপিং জেটিঘাটে দু’জন জলসাথী প্রকল্পের কর্মীর দেখা মিললেও রতনবাবুর ঘাট, কাশীপুর ঘাট বা বাগবাজার ঘাটে এক জনকেও দেখা গেল না। ভূতল পরিবহণ নিগমের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘লঞ্চ থেকে ওঠানামার সময়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাই জলসাথী কর্মীদের কাজ। যাত্রীদের কেউ হঠাৎ জলে পড়ে গেলে ওই কর্মীরাই লাইফ জ্যাকেট পরে তৎক্ষণাৎ জলে ঝাঁপ দিয়ে বিপদগ্রস্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সব ঘাটে জলসাথী কর্মীদের রাখা সম্ভব হয়নি।’’ বিপদ ঠেকাতে সমস্ত লঞ্চঘাটে জেটির চার দিকে রেলিং থাকার কথা। কিন্তু কোনও লঞ্চঘাটেই তা দেখা যায়নি। ছিল না লাইফ জ্যাকেটও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy