Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Ayodhya

অযোধ্যা-কাণ্ডে গোল্লা ছেড়ে লাড্ডুর খোঁজ শহরে

লকডাউনের সমস্যার কথা বলে শেষমেশ দোকান আর্জি ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে রিষড়ার ফেলু মোদক থেকে কলকাতার ভবানীপুরের বলরাম ময়রারা কিন্তু মিষ্টির ভুবনে অ-বাংলাভাষীদের স্বাক্ষর লাড্ডুর সাম্রাজ্যে ভাগ বসাচ্ছেন।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৪
Share: Save:

পদ্মফুল ছাপ ছোট নরমপাক সন্দেশ। তাতে রামের নাম। অযোধ্যায় ভূমিপুজোর দিনে কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে পৌঁছে দিতে মরিয়া ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার তথাকথিত বাহুবলী বিধায়কের সাঙ্গপাঙ্গরা। রিষড়ার শতাব্দী-প্রাচীন দোকানে সেই মতো আর্জিও জানিয়েছিলেন।

লকডাউনের সমস্যার কথা বলে শেষমেশ দোকান আর্জি ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে রিষড়ার ফেলু মোদক থেকে কলকাতার ভবানীপুরের বলরাম ময়রারা কিন্তু মিষ্টির ভুবনে অ-বাংলাভাষীদের স্বাক্ষর লাড্ডুর সাম্রাজ্যে ভাগ বসাচ্ছেন। বলরামের কর্ণধার সুদীপ মল্লিকের দাবি, ‘‘লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও লাড্ডুর চাহিদা গত দিন দুয়েকে পাঁচ গুণেরও বেশি।’’ এর মধ্যে ডিউস বলের থেকে সামান্য ছোট মেজ লাড্ডুর চাহিদাও ভালই বলতে হবে। তবে ফেলু মোদকের অমিতাভ মোদক বলছেন, ‘‘এই দিন বড়সড় অর্ডার যা আসছিল, তা মূলত রাজনীতির লোকেদের থেকে, সাধারণ ঘরে পুজোর জন্য লাড্ডুর চাহিদা টের পাইনি।’’

কলকাতার লাড্ডু স্থপতিদের মধ্যে তিওয়ারিও বুধবার তাদের চারটি দোকান বন্ধ রেখেছিল। অনলাইন কারবার চলেছে শুধু নিউ আলিপুরে। তবে বরাতমাফিক বানানো মেগাসাইজ লাড্ডু নিয়ে খানিক আফশোস রয়েছে শহরের কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিজেপি নেতার মধ্যে। তাঁরা বলছেন, ‘‘বিলি করা না-গেলে এ জিনিস পেয়েও সুখ নেই।’’

তিওয়ারির তরুণ কর্তা রামলাল তিওয়ারি বলছিলেন, দোকানের তিন ধরনের লাড্ডুর কথা। বেসনের বুঁদি, মতিচুর লাড্ডু, কাজু-পেস্তা বাটার লাড্ডুর কথা। পুজোপার্বণে আজকাল বুঁদির লাড্ডুই বেশি চলে। কিন্তু রাম মন্দিরের ভূমিপূজনে কি চাহিদা বাড়ল লাড্ডুর? শুনে রামলাল রহস্যপূর্ণ হাসি হাসেন, ‘‘সে তো দু’দিন আগে থেকেই লকডাউনের পড়তি বাজারের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি চাহিদা ছিল। কিন্তু সেটা রাখি না শ্রীরাম, কার জন্য বলি কী করে!’’

শতাব্দী-প্রাচীন গাঙ্গুরাম বা দামের নিরিখে বিত্তশালীদের যাতায়াতের দোকান ছপ্পান ভোগের কর্তারা অবশ্য লাড্ডুর কাটতি এই লকডাউনে পড়ে গিয়েছিল বলে মানতে রাজি নয়। গাঙ্গুরামের রাহুল চৌরাসিয়া বলছেন, ‘‘শুধু বাংলার ঘরানার মিহিদানার লাড্ডুই নয়, কেশরিয়া পেঁড়ারও ভালই চাহিদা মালুম হয়েছে ক’দিন ধরে।’’ এ মাসেই গণেশ পুজো উপলক্ষে ২৫০ গ্রাম ওজনের লাড্ডুরও বরাত তাঁরা পেতে শুরু করেছেন। গণেশ পুজোর আগেই দু’দিন লকডাউন। তাই আগেভাগে ‘ডেলিভারি’ দেওয়ার পরিকল্পনাও সেরে রাখা হচ্ছে। ছপ্পান ভোগের রাঘব শরাফের কথায়, ‘‘লাড্ডু সন্দেশ-রসগোল্লার থেকে বেশি টেকসই। রেখে খাওয়ার সুবিধে। তাই এই লকডাউন-পর্বে লাড্ডুর চাহিদা একফোঁটা কমেনি!’’

বুধবার গণেশ পুজো। অযোধ্যায় রামের পুজোর আগে বিধিমাফিক সিদ্ধিদাতাও পুজো পেয়েছেন। রাঘব বলছিলেন, ‘‘বুধবার, শনিবার দু’দিনই লাড্ডুর চাহিদা বেশি থাকে। তার উপরে সবে রাখি গিয়েছে। সব মিলিয়ে লাড্ডুর পোয়া বারো।’’

তবে নিছকই অ-বাংলাভাষীরা নন, বাঙালিদের থেকেও এই দিনে লাড্ডুর বরাত এসেছে। হিন্দুস্তান সুইটসের কর্ণধার রবীন্দ্রকুমার পাল বলেন, ‘‘অনলাইনেই ১৬ টাকা ও ১১ টাকার লাড্ডু বেলা ১১টার মধ্যে শেষ। চাহিদা অন্য দিনের দ্বিগুনেরও বেশি।’’

তবে কলকাতার এই লাড্ডুপ্রীতির সঙ্গে ধর্মের থেকে রাজনীতির যোগটাই বেশি। কাশী বোস লেনের প্রয়াত কুলপতি গোবিন্দরাম চৌধুরীর নাতি, অধুনা সল্টলেকবাসী লোকেশ চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘আমাদের ঠাকুরঘরে শ্রীরামচন্দ্র রয়েছেন। তবে আজ তো পুজোর দিন নয়। তাই বাড়তি কিছু হয়ওনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy