শুভলক্ষ্মী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ
বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় নিজের বাড়ির সামনেই মৃত্যু হল এক স্কুলশিক্ষিকার। পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে ওই দুর্ঘটনা ঘটে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ও কালী টেম্পল রোডের মোড়ে। মৃতার নাম শুভলক্ষ্মী বন্দ্যোপাধ্যায় (৪১)। তাঁর বাড়ি ৭১/এ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে। বিধান সরণির একটি স্কুলে পড়াতেন তিনি।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ কালী টেম্পল রোডে ফুল-মালা কিনতে গিয়েছিলেন শুভলক্ষ্মী। কালীঘাট ট্রাম ডিপোর সামনে রাস্তা পেরোনোর সময়ে হাজরা মোড় থেকে রাসবিহারী মোড়ের দিকে ছুটে আসা একটি এসইউভি তাঁকে সজোরে ধাক্কা মারে। গাড়ির বনেটের উপরে উঠে গিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন ওই শিক্ষিকা। কিন্তু চালক গাড়ি না থামিয়ে আরও জোরে যেতে গিয়ে মহিলাকে ফের ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। মাথায় গুরুতর চোট পান শুভলক্ষ্মী।
টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ডের দু’নম্বর বিটের কর্মী সঞ্জীব কর সিগন্যাল পোস্ট থেকে দৌড়ে গিয়ে ওই শিক্ষিকাকে তোলেন এবং একটি ট্যাক্সিতে চাপিয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে কালীঘাট থানার পুলিশও ওই হাসপাতালে যায়। মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে বলেন। পুলিশ এসএসকেএমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শুভলক্ষ্মীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, মহিলাকে উদ্ধার করার সময়ে দু’নম্বর বিটের কর্মী সঞ্জীব পাঁচ নম্বর বিটের কর্মী মৌসম মহতিকে ওয়াকিটকি মারফত জানান, ওই এসইউভি গাড়িটিকে থামাতে হবে। মৌসম রাসবিহারী মোড়ের আগে গাড়িটিকে থামান ও চালককে
জানলার কাচ নামাতে বলেন। ওই গাড়িটির সামনে ছোট একটি মালবাহী গাড়ি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশের অভিযোগ, চালক কাচ তো নামায়ইনি, উল্টে গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে আচমকা গতি বাড়িয়ে মালবাহী গাড়িটির লুকিং গ্লাস ভেঙে দিয়ে গড়িয়াহাটের দিকে পালায়। পুলিশ জানায়, মৌসম দ্রুত সরে না গেলে তাঁকেও ধাক্কা মেরে দিত চালক। তবে পুলিশ গাড়িটির নম্বর জানতে পেরেছে। চালক ও গাড়ির খোঁজ চলছে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে শুভলক্ষ্মীর শ্বশুরবাড়ি। তাঁর বাবা-মায়ের বাড়ি উত্তর কলকাতায়। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এ দিন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ শ্বশুর অমরনাথবাবু ও শাশুড়ি শান্তিদেবী সমানে কেঁদে চলেছেন। অমরনাথবাবু জানালেন, ২০০৩ সালে তাঁদের একমাত্র ছেলে মৃণালের সঙ্গে বিয়ে হয় শুভলক্ষ্মীর। ছেলে-বৌমা নিঃসন্তান ছিলেন। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার সকালে শুভলক্ষ্মী কালী টেম্পল রোডে যেতেন গৃহদেবতার জন্য ফুল ও মালা কিনতে। এ দিন ৬টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। সাড়ে ৭টা বেজে গেলেও বৌমা না ফেরায় শান্তিদেবী স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে খোঁজ করতে বলেন। অমরনাথবাবু পাড়ায় ঘুরেও বৌমার খবর না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিছু ক্ষণ পরে তাঁদের পরিচারিকা বাড়িতে ঢুকে জানান, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন শুভলক্ষ্মী। পরে কালীঘাট থানা থেকে অমরনাথবাবুকে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
মৃতার শ্বশুর জানান, তাঁর ছেলে মৃণাল শিলিগুড়িতে কাজে গিয়েছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাগডোগরা থেকে বিমানে বাড়ি ফিরছেন। শুভলক্ষ্মীর বাবা অমিতাভ মুখোপাধ্যায় মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। মৃতার মা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy